বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড লাইভ দেখু'ন এই লিংকে rtnbd.net/live
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত চলছে। তাই তদন্তের প্রয়োজনে সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ক্যাম্পাসে এসেছেন অভিযুক্তরা। তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলছেন ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী তাবাসসুম। তবে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকালে হলে আসার পর অভিযুক্ত দুই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুটি তদন্ত কমিটিই তাদের বক্তব্য শুনবে। তবে ভুক্তভোগী ছাত্রী আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসেননি। আগের দিন তিনি ক্যাম্পাসে আসায় সোমবার আসার প্রয়োজন হয়নি।
এদিকে দুই নেত্রী ক্যাম্পাসে আসার খবরে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, শনিবার ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ক্যাম্পাসে ডাকা হয়েছিল। আজ সকাল ১০টায় অভিযুক্তদের ডাকা হয়েছে। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি ও পরে হলের তদন্ত কমিটি তাদের সঙ্গে বসবেন।
এর আগে হাইকোর্টে রিট হলে তদন্ত কমিটির গঠন এবং তদন্তের স্বার্থে দুই ছাত্রলীগ নেত্রীকে হলের বাইরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাস ছাড়েন তারা।
ছাত্রী নির্যাতন: কী ঘটেছিল সেই রাতে?
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা অন্তরার নেতৃত্বে এক নবীন শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলের অভ্যন্তরে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। কিন্তু আসলে ওই রাতে কী ঘটেছিল?
গত বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগী ক্যাম্পাস ছাড়লে এ বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকেই। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে সেই রাতের ভয়াবহ চিত্র।
ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ওই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই রাতে গণরুমে অবস্থান করা এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করে বলেন, রাতে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে গণরুমের একটি কক্ষে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও চড় থাপ্পড় মারা হয়। ভুক্তভোগী যা বর্ণনা দিয়েছে, তার চেয়েও বেশি নির্যাতন করা হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যদিও যে রুমে নির্যাতন করা হয় তার পাশের রুমে ছিলাম। তবে, একটি দেওয়ালের ওপর এক হাত পরিমাণ ফাঁকা থাকায় সেখান দিয়ে সব কথা ও শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ওই শিক্ষার্থীকে বেশ জোরে চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয়। আমরা ওর কান্না ও আকুতির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।
গণরুমে থাকা ওই ছাত্রী আরও বলেন, ওর ওপর নির্যাতনের শব্দ আমাদের রুমের অনেকেই সহ্য করতে পারছিল না। তারা অন্য সাইডে চলে যায়। আমরা কয়েকজন নিঃশব্দে কান্না করতে থাকি। পরে বাইরে গিয়েও বসেছিলাম কিছুক্ষণ। রাত ১১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত রুমে নির্যাতনের পর একজন বলে রুমের বাইরে নিয়ে যেতে, তখন ওকে ডাইনিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পাশের রুমে অবস্থানকারী আরেক আবাসিক ছাত্রী বলেন, নির্যাতনকারীদর মধ্যে একজন পাশের বাকি তিনটা গণরুমের সবাইকে হুমকি দিয়ে বলেন, কেউ যদি রুমের বাইরে বের হয়, তার খবর আছে। আমাদের ওয়াশরুমেও যেতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে তারা ওই ছাত্রীকে প্রভোস্ট স্যারের বিরুদ্ধে গালাগালি দিতে বলে এবং ভিডিও করে। এমন নির্যাতন রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত চলতে থাকে। পরে কলা অনুষদের এক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা থাকায় সে চিৎকার করে উঠলে নির্যাতনকারীরা ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হলের ডাইনিংয়ে নিয়ে যায়।
গণরুমের ছাত্রীদের ভাষ্যমতে, নির্যাতনকারীদের মধ্যে ফাইন আর্টস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা খাতুন উর্মী, আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মীম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মাওয়াবিয়াসহ কয়েকজন ছিলেন।
তবে এ বিষয় মীম বলেন, আমি ওই সময় ওখানে ছিলাম না। আমার রুমেই ছিলাম। আমি কেবল অন্তরা আপুর নির্দেশে ওকে দোয়েল রুমে রেখে চলে আসি।
এদিকে, হলের সাবেক এক আবাসিক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরার বিষয়ে বলেন, আমার পাশেই অন্তরা থাকতো। ও বেশ শান্ত স্বভাবের ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পদ পাওয়ার পর থেকেই তার দৌরাত্ম ও ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়। সবাইকে তার কথা শোনাতে বা বাধ্যগত করতে উঠেপড়ে লাগে সে।
প্রসঙ্গত, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বুধবার হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আজগর হোসেন তুহিন। তখন তাদের লিখিত আবেদন দিতে বলেন আদালত। সে অনুসারে তারা জনস্বার্থে রিট করেন।
বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার অভিযুক্তরা হল ছাড়েন।