ডিএনএ টেস্টে জানা গেল কিশোরীর পিতা আ’লীগ এমপি

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

‘ফারুক’ পরিচয়ে এক নারীকে বিয়ে করেন তিনি। পরে বিয়ের প্রমাণাদি গোপনে গায়েব করে দেন। তবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করতে থাকেন তারা। এক সময় নারীটি সন্তানসম্ভাবা হন। তখন গর্ভজাত সন্তান নষ্ট করতে চাপ-সৃষ্টি করেন স্ত্রীর ওপর। মা সিদ্ধান্তে অনড়। বহু নির্যাতন সহ্য করেই মা হন ওই নারী। কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। কিন্তু নিজের ঔরসজাত সন্তানকে অস্বীকার করেন ফারুক। এ নিয়ে চলে দীর্ঘ বাদ-বিসম্বাদ। মাঝে কেটে যায় দেড় দশক। শৈশব পেরিয়ে সন্তান এখন কৈশোরে। বাবার নাম-পরিচয় জানতে চায় সে। চায় পিতৃত্বের অধিকার। লা-জওয়াব মা তখন আশ্রয় নেন আইনের। নামেন আইনের এক অনন্ত লড়াইয়ে। প্রথমত: স্ত্রী হিসেবে নিজের স্বীকৃতি চান। চান সন্তানের পিতৃপরিচয় ও অধিকার। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এ গতবছর ২২ এপ্রিল সিআর মামলা (নং-৪২/২০২২) আদালতে মামলা করেন তিনি।

আর্জি মতে, ঘটনা ২০০১ সালের। ‘ফারুক’ নামের ব্যক্তিটি পরিচিত হন মামলার বাদিনীর সঙ্গে। বাদিনী জানান, তার স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে ২০০০ সালে। ওই নারীকেও ফারুক জানান, তারও স্ত্রী মারা গেছেন। দু’জনের মন দেয়া-নেয়া হয় এর মধ্যেই। ফারুক এক পর্যায়ে বাদিনীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে নারী তাতে সম্মতও হন। ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর। বাদিনীর চাচা মোবারক হোসেন বাবুর উপস্থিতিতে ফারুক ও বাদিনীর শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে সম্পন্ন হয়। পরে তারা প্রথমে মগবাজার, পরে মোহাম্মদপুর মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটির একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। সেখানেই কাটছিল তাদের সুখের দাম্পত্য জীবন। বাদিনীকে ফারুক স্বপ্ন দেখান। ভাড়া বাসায় বসবাসের দুঃখের এই দিন তাদের থাকবে না। শিগগিরই স্ত্রীকে কিনে দেবেন ফ্ল্যাট। টাকা-পয়সাও জমানো আছে। সামান্য কিছু টাকা হলেই ফ্ল্যাটটি বাদিনীর নামে রেজিস্ট্রি করে ফেলবেন। আশায় বুক বাঁধেন বাদিনী। উচ্ছ¡াসে স্বামীর হাতে তুলে দেন নিজের জমানো ১০ লাখ টাকা। খুলে দেন হাতের বালা, গলার চেইনসহ অন্তত : ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। সুখ-সায়রিতে ভাসে দু’জনের দাম্পত্য জীবন। এরই মধ্যে বাদিনীর পেটে চলে আসে সন্তান। তথ্যটি ফারুককে জানাতেই যেন পিলে চমকে ওঠে। বাদিনীকে প্রথম অনুরোধ জানান সন্তান নষ্ট করে দিতে। কিন্তু বেঁকে বসেন বাদিনী। ক্রমে তার ওপর বাড়তে থাকে ফারুকের বহুমাত্রিক চাপ। রোজ দেরি করে বাসায় ফেরেন ফারুক। এলেও কথা বলেন না। বাদিনীকে এড়িয়ে চলেন। সৃষ্টি করেন দূরত্ব। অফিস-মিটিং-ট্যুর-ইত্যাদি ছুতোয় ফারুক রাত কাটান বাসার বাইরে। বাসায় আসাই কমিয়ে দেন। ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ভ‚মিষ্ঠ হয় কন্যাসন্তান। এ খবর জেনে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগই বন্ধ করে দেন। তখন বাদিনী বুুঝতে পারেন, তার সঙ্গে বিয়ের নামে প্রতারণা হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে জানতে পারেন, তার নামও ফারুক নয়। ফারুক পরিচয়ে বিয়ে করলেও তার প্রকৃত নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু। তার আগের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এ বিষয়ে বাদিনী ফারুকের সঙ্গে দেন-দরবার করতে চাইলে ফারুক তাকে হুমকি দেন। সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেন। এসব বিষয়ে তখন তিনি একাধিক সাধারণ ডায়েরিও করেন।

গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বাদিনীর সঙ্গে স্বাভাবিক যোগাযোগও বন্ধ করে দেন। তবে চলতে থাকে সম্পর্কের টানাপড়েন। সন্তানের পিতৃত্ব সম্পূর্ণ অস্বীকার করলে দেড় দশকের মাথায় মামলা করতে বাধ্য হন বাদিনী। সন্তানের পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করতে আদালতে ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) টেস্ট’র আবেদন জানান। এতেই বিগড়ে যান ফারুক। আশ্রয় নিতে থাকেন নানা ক‚টকৌশলের। ফারুক বিচারিক আদালতের নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। তবে শুনানি শেষে রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এছাড়াও নানাভাবে বিঘœ সৃষ্টি করেন ডিএনএ টেস্টে। আদালতের নির্দেশে প্রায় এক বছরের চেষ্টায় ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন হয় ফারুকের। টেস্ট করানো হয় বাদিনী ও তার কিশোরী কন্যার। সিআইডি’র ল্যাবের দেয়া ডিএনএ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফারুকই হচ্ছেন কিশোরীর জৈবিক পিতা। পিবিআই’র তদন্তে বেরিয়ে আসে, কথিত ফারুকের অজানা অধ্যায়। খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুক নিজ পরিচয় গোপন করে প্রতারণামূলকভাবে বিয়ে করেন বাদিনীকে। এ এছাড়া এই ‘খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুক’ও যে সেই ব্যক্তি নন। তিনি একজন এমপি। পাবনা-২ আসন থেকে নির্বাচিত সরকারদলীয় এমপি ছিলেন তিনি। দলীয় পরিচয়-প্রভাব প্রতিপত্তি ব্যবহার করে আজিজুল হক আরজু দীর্ঘদিন ধরে ঘটিয়ে চলেছেন প্রতারণা, ধ'র্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো বহু ঘটনা। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় অনেক নির্যাতিতাই তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাননি। তবে সন্তানের পিতা হিসেবে সামাজিক স্বীকৃতির দাবিতে আইনি লড়াইয়ের বর্তমান পর্যায়ে সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু এখন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।

গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগ সত-মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম সামসুন্নাহার মামলাটি নারী ও শিশু ২৭/২৩ নম্বর মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে আসামি আজিজুল হক আরজুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সেইসাথে তামিল-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে আগামী ২৩ ফেব্রæয়ারি তারিখ ধার্য করেন। এদিকে আসামি খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুক যাপন করছেন পলাতক জীবন। তবে পলাতক অবস্থায়ই মামলার বাদিনীকে আরজু হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন-মর্মে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী নারী। এ বিষয়ে তিনি আরজুর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদিনী ভুক্তভাগী নারী ইনকিলাবকে বলেন, আজিজুল হক আরজুর বিরুদ্ধে ডিএনএ টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করেছেন। এর পরপরই আরজু আমার সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। কুৎসা রটাচ্ছেন। আবার কখনো মামলা তুলে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের অনুরোধ জানাচ্ছেন। হুমকির বিষয়ে এর মধ্যেই আমি জিডি করেছি। আগামী তারিখে এটি আদালতে দাখিল করব।
এদিকে হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক এমপি আজিজুল হক আরজু ইনকিলাবকে বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতি হিংসার শিকার। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমার এলাকায় আমি সাধারণ মানুষের আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক। তবে আমারও প্রতিপক্ষ আছে। তারাই একজনকে ব্যবহার করে আমাকে সামাজিকভাবে, মানুষিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য যা করার তাই করছে। হুমকি প্রসঙ্গে বলেন, আমার ৬৩ বছর বয়সে এতো জঘণ্য হতে পারি না। এগুলো মিথ্যা।

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি এখনো বিচারাধীন। এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা সমীচীন নয়। তবে যে সন্তানের ঘটনায় ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে, সেই শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদে পিতার নামের স্থলে ভিন্ন ব্যক্তির নাম রয়েছে। পরে আরজু জন্মনিবন্ধনের কপি এ প্রতিবেদকের হ্য়োাটঅ্যাপে পাঠান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ওই নারীর সঙ্গে আমার বিয়ের কোনো কাবিননামা কিংবা কোনো যুগল ছবিও যদি দেখাতে পারেন ফাঁসিও মেনে নেব।

Check Also

ইভিএম থেকে সরে এসেছি, সিসি ক্যামেরাও থাকছেনা: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, ইভিএম নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত নির্বাচন কমিশন সংখ‌্যাধিক‌্যের মতামতের ভিত্তিকে …

2 comments

  1. ডিএনএ টেস্টে ও আওয়ামী লীগ বুঝা যায়?

  2. জয় বাংলা