৪ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েও বনজ কুমার থেকে রেহাই পাননি আ.লীগ নেতা, দিলেন নিজ মুখে স্বীকারোক্তি

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

৪ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েও বনজ কুমার থেকে রেহাই পেলেন না আলীগ নেতা, নিজ মুখেই স্বীকারোক্তি, দেখু'ন ভিডিওতে,

আরো পড়ুন ইলিয়াস হোসাইনের ভিডিও: মামলার এজাহারে যা বলেছেন বনজ কুমার

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হ'ত্যার ঘটনায় একটি ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে আলোচনায় এসেছেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন। গত ৩ সেপ্টেম্বর ‘স্ত্রী খু'ন, স্বামী জেলে, খু'নি পেয়েছেন তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ভিডিও কনটেন্ট প্রকাশ করেন তিনি। ভিডিওতে মিতু হ'ত্যা, বাংলাদেশ পুলিশ, পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার ও সাম্প্রদায়িক ইস্যুসহ বেশ কিছু বিষয় দেখানো হয়। ভিডিওটিকে আপত্তিকর এবং অসত্য দাবি করে ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেছেন পিবিআই প্রধান। তিনি ভিডিওতে উপস্থাপিত তথ্যগুলোর যুক্তি খণ্ডন করেছেন মামলার আবেদনে।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল অ্যাক্টে দায়ের করা ওই মামলায় ইলিয়াস হোসাইন, বাবুল আক্তার, তার ভাই হাবিবুর রহমান লাবু ও তার বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়াসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। মামলাটি ধানমন্ডি থানা পুলিশ তদন্ত করবে।

মামলার এজাহারে বনজ কুমার উল্লেখ করেন, ‘আমার নেতৃত্বাধীন তদন্ত সংস্থার অধীন পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রোতে দেশের চাঞ্চল্যকর মিতু হ'ত্যা মামলা তদন্তাধীন। সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার প্রধান আসামি হিসেবে তদন্তে প্রকাশ পায়। তদন্তকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জেল হাজতে আটক থাকা সাবেক এসপি বাবুল আক্তার মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করাসহ বাংলাদেশ পুলিশ ও পিবিআইর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেন। এ জন্য আসামিরা হীন উদ্দেশ্যে দেশে ও বিদেশে অবস্থান করে বিভিন্ন অপকৌশল এবং ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করেন।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘‘এরই ধারাবাহিকতায় বাবুল আক্তার ও অন্য আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় কথিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় তার ফেসবুক আইডি’র মাধ্যমে ‘স্ত্রী খু'ন, স্বামী জেলে, খু'নি পেয়েছেন তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন। ৪২.২১ মিনিট দীর্ঘ এই ভিডিও সম্পর্কে আমি ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় অবগত হই।’’

বনজ কুমারের দাবি, ‘ভিডিওতে বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে মিতু হ'ত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইলিয়াস হোসাইন ভিডিওতে প্রচারিত বক্তব্যে দেশের ভাবমূর্তি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উসকানি, বাংলাদেশ পুলিশ এবং পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই, বিশেষ করে আমার মান-সম্মান ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছেন। যার জন্য দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এর নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে।’

তিনি এজাহারে লিখেছেন, ‘ইলিয়াস হোসাইনের বক্তব্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করার, রাষ্ট্রের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস করেছেন।’

ইলিয়াস হোসাইন ভিডিওতে দাবি করেছেন, ‘২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের বাহার মার্কেটে স্বর্ণের গুদামে অভিযান চালান বাবুল আক্তার। সেই অভিযানের খবর শুনে বনজ কুমার মজুমদার ফোন করেন বাবুল আক্তারকে। বাবুল অভিযান বন্ধ করতে রাজি না হলে প্রথমে ৫০ লাখ থেকে শুরু করে সর্বশেষ দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষের প্রস্তাব দেন বনজ।’ এ বিষয়ে বনজ কুমারের ব্যাখ্যা—‘ওই অভিযানটি একটি গোয়েন্দা শাখার তথ্যের ভিত্তিতে চালানো হয়। সাবেক সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ডিবি ও কোতোয়ালি থানা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে বাবুল আক্তারের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান ছিল না। তিনি ওই মামলার বাদী, সাক্ষী কিংবা তদারককারী অফিসারও ছিলেন না। তিনি শুধু অভিযানের শেষ মুহূর্তে হাজির হন বলে শুনেছি। ইলিয়াস হোসাইনের ভিডিওতে প্রচারিত যে স্বর্ণ চোরাচালানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো ২০১৬ সালের ঘটনা। তখন আমি সিএমপিতে কর্মরত ছিলাম না। ২০১৫ সালের ১৭ জুন তারিখ থেকে আমি ঢাকা মহানগর পুলিশে জয়েন্ট কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) হিসেবে কর্মরত ছিলাম।’

ইলিয়াস হোসাইন ভিডিওতে আরও বলেন, ‘বাবুল আক্তার জানতে পারেন, ভারতীয় চক্রের স্বর্ণ পাচারের ব্যবসার সঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার এবং সময় টিভির সাংবাদিক কমল দে-সহ একটি বিশেষ ধর্মের বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত।’

এই অভিযোগ প্রসঙ্গে বনজ বলেন, ‘বক্তব্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন, যা আমার জন্য মানহানিকর।’
বনজ কুমার এজাহারে আরও বলেন, ‘আসামি বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর হ'ত্যাকাণ্ডটি জঙ্গিদের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে বলে নিজের দাখিলকৃত এজাহারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি পুলিশের আবেগকে কাজে লাগিয়ে মামলাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এরপরও আসামিরা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে, যা আমার জন্য মানহানিকর।’

তিনি দাবি করেছেন, ‘‘সহজেই প্রতীয়মান হয় যে শুধু মিতু হ'ত্যা মামলার তদন্ত ও বিচারকার্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই হাবিবুর রহমান লাবু, আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও বাবুল আক্তারদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় এবং সার্বিক সহযোগিতায় ইলিয়াস হোসাইন অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশ পুলিশ ও বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই এবং আমার মান-সম্মান চরমভাবে ক্ষুণ্ন করার জন্য এই ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুকে প্রচার করেছেন। ভিডিওতে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ‘পুলিশের ভেতরেই বাবুল আক্তারের প্রতিপক্ষ ছিল’ শিরোনামে একটি সংবাদের রেফারেন্স হিসেবে উপস্থাপন করেন, যার অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করেছেন বনজ কুমার।’’

প্রসঙ্গত, ভিডিওটি প্রকাশের ২৪ দিন পর বনজ কুমার ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল অ্যাক্টে মামলাটি করেন। মামলার বিষয়ে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকরাম আলী মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পিবিআই প্রধানের পক্ষে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তরের এসপি জাহাঙ্গীর আলম। তার অভিযোগ মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। মামলা নম্বর-২৪। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল ইসলাম।’

Check Also

‘পর্যবেক্ষক নিয়োগের চেয়ে বড় প্রশ্ন কেন পর্যবেক্ষক সরানো হয়েছিল’

ইসলামী ব্যাংক থেকে পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ‘ভুল’ ছিল এবং এস আলম গ্রুপকে ‘রক্ষা করার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *