পাপিয়ার গডফাদারদের ছবি প্রকাশের খেসারত দিচ্ছেন সাংবাদিক কাজল

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে অর্থাৎ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে (রোববার) ফটোসাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকালের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলের সন্ধান মিলে। এরপর অন্য আসামীদের মতোই পিছমোড়া করে হাতকড়া পরিয়ে তাকে আদালতে তোলা হয়। অনুপ্রবেশের মামলায় কাজল জামিন পেলেও আদালত ৫৪ ধারায় দায়ের যশোর পুলিশের মামলায় কারাগারে পাঠান।
গত ১০ মার্চ পুরান ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন শফিকুল ইসলাম কাজল৷ ৫৪ দিন পর ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় বেনাপোলের সাদিপুর সীমান্তে বিজিবি তাকে আটক করে। জন্মভূমিতে ‘অনুপ্রবেশের’ দায়ে কাজলকে আদলতে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। ওই মামলায় শফিক কাজলকে যশোরে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলাম জামিন দেন। তবে যশোর কোতোয়ালি থানার সন্দেহমূলকভাবে আটক রাখার আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫৪ ধারায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

এ বিষয়ে যশোরের কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ঢাকায় শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আাছে তাদের কাছে খবর এসেছে। মামলা বিস্তারিত তথ্য না আসায় তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে এবং আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে। পরে অবশ্য ওসি জানান, নিখোঁজ থাকা এই সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল আইনে তিনটি মামলা আছে। মামলাগুলো ধারা অজামিনযোগ্য।

যুবলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া-কাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে   ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শেরেবাংলা থানায় মামলা করেন মাগুরা-১ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ সাইফুজ্জামান শিখর। শফিকুল ইসলাম তাঁর ফেসবুকে প্রকাশিত খবরের শেয়ার করায় তাঁকেও ওই মামলায় আসামি করা হয়।

মামলার পরপরই নিখোজ হন সাংবাদিক কাজল।তার সন্ধান চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিক বার সংবাদ সম্মেলন করা হয়।তার কোন খোজ না পেয়ে শেষে অপহরণ মামলা করে পরিবার, কিন্তু এরপরো সাংবাদিক কাজলের কোন কুল কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে সাংবাদিক শফিক কাজলের ছেলে মনোরম কাজল নিখোঁজ বাবার সন্ধান পেয়ে করোনার দূর্যোগের মধ্যেই গণপরিবহণ বন্ধসহ নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ওইদিন বিকেলে যশোর পৌছান। যশোরের আদালত চত্বরে মিনিট পাঁচেকের জন্য তিনি বাবার সঙ্গে ছেলে কথা বলার সুযোগ পান। মনোরম পলক তাকে জড়িয়ে ধরলে অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন সাংবাদিক কাজল। তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ।

সোমবার (৪ মে) দুপুরে শফিকুল ইসলাম কাজলের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে যশোরে অবস্থানরত মনোরম পলকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পূর্বপশ্চিম। এসময় নিখোঁজ বাবার সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আসলে ওই সময় মনের অবস্থা ছিল অন্যরকম। বাবাকে ফিরে পেয়েছি এটাই ছিল অনেক আনন্দের বিষয়। উনাকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে কেন? কোন মামলায় তাকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে, কবে জমিন পাবেন? জামিন আবেদনের শুনানি কবে হবে ? এসব বিষয় একদম মাথায় আসেনি । ওই সময় সবাই বলেছে আইনগত জটিলতায় দু’একদিন বাবা জেলে রাখা হতে পারে, এরপরই তিনি মুক্তি পাবেন। তাই দুশ্চিন্তা করিনি। তাছাড়া বাবা প্রিজন ভ্যানে ওঠার আগে আমাকে বলেন, ভয় পাবি না। আমি কোনো অন্যায় করিনি। সত্যের জয় হবেই। বাবার এ কথাটা আমি বিশ্বাস করি’।

করোনার কারণে যশোরে আবাসিক হোটেল- রেস্তোরা বন্ধ থাকায় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জানিয়ে পলক বলেন, ‘রাতে থানা থেকে তেমন কোনো তথ্য পাইনি। স্থানীয় সাংবাদিকরা আমার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। সকালে কোতওয়ালি থানার ওসি জানিয়েছেন, ঢাকায় বাবার বিরুদ্ধে তিন থানায় ডিজিটাল আইনের তিনটি মামলা আছে। ঢাকায় ওগুলো ফরোওয়ার্ডিংয়ের কাজ চলছে। ওই কাগজপত্র এলে আদালতে নির্দেশনা নিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠানো হবে। মামলাগুলোর শুনানি ঢাকাতেই হবে। ঢাকায় কবে পাঠানো হবে, এ বিষয়ে ওসি নিশ্চিত করে কিছু জানাননি।’

মনোরম পলকের সঙ্গে যশোরে অবস্থান করছেন সাংবাদিক শফিক কাজলের আইনজীবী দেবাশীষ দাস। পূর্বপশ্চিমকে তিনি জানান, বিজিবির দায়ের করা অনুপ্রবেশের মামলায় রোববার কাজলের জামিন হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে গত ৯, ১০ ও ১১ মার্চ রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগর, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গির চর থানায় দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি মামলার কারণে তাকে যশোর পুলিশের ৫৪ ধারায় দায়ের করা মামলাতেই তাকে কারাগারে রাখার নির্দেশ দেন আদালত।

এডভোকেট দেবাশীষ দাস আরও জানান, কারা কতৃপক্ষ জানিয়েছে কাজলকে তারা বিশেষ ব্যবস্থায় কোয়ারেন্টিনে রেখেছেন। ঢাকা থেকে মামলার কাগজপত্র আসেনি। তাই কাজলকে কবে ঢাকায় পাঠানো হবে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

দৈনিক পক্ষকাল পত্রিকার সম্পাদক ও সুপরিচিত ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের পরিবার গ্রামের বাড়ি মেহেরপুর সদর উপজেলার কাশারীপুর গ্রামে মনোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি ঢাকার ১৩/২ বকশীবাজার ঠিকানায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করছিলেন। গত ১০ মার্চ তিনি ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন। এর দুইদিন পর শফিক কাজলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী ঢাকার চকবাজার থানায় একটা সাধারণ ডায়েরি করেন।

ঢাকায় স্বামী ও সন্তানের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকা জুলিয়া ফেরদৌসীর সঙ্গে কথা হয় পূর্বপশ্চিমের। তিনি জানান, শনিবার গভীর রাতে কাজলের সঙ্গে কথা হয়। পরদিন তাকে আনতে যশোর যায় ছেলে মনোরম পলক। রোববারে দুপুরের মধ্যে তাদের ঢাকার ফেরার কথা। কিন্তু গতকাল তার জামিন না হওয়ায় আজকে আবার কোর্টে জামিন আবেদন জানানোর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে নিয়মিত কোর্ট না বসায় আজকে আর জামিনের সম্ভাবনা নেই। ছেলে পলক কিছুক্ষণ আগে জানিয়েছে, নিয়মিত কোর্ট শুরু হবে সাধারণ ছুটি শেষে ১৪ মের পর। এর আগে বিশেষ অদালতে তার জামিন শুনানি করা যায় কিনা সেই চেষ্টা করছে কাজলের আইনজীবী।

শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল আইনের তিনটি মামলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পূর্বপশ্চিমকে জুলিয়া ফেরদৌসী বলেন, ‘উনার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা জানতে পারি নিখোঁজ হওয়ার পরে। মামলাটি করেন মাগুরার আওয়ামী লীগের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর ।যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িতদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, ওই মামলায় কাজলকে আসামী করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এমপি সাইফুজ্জামান শিখর এমপি মামলা দায়েরর পরই কাজল নিখোঁজ হন। এছাড়া আরও একটা মামলার কথা জানতে পারি পরে। হাজারীবাগ থানায় করা ওই মামলাটার বাদী আওয়ামী লীগ নেত্রী উসমিন আরা বেলি। তিনি মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ, মানহানি আর আর চাঁদাবাজির অভিযোগ জানিয়ে মামলাটি করেন। ওইটাও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের।’

সাংবাদিক কাজলের স্ত্রী আরও বলেন, ‘দুইটা মামলার কথাই এতদিন আমাদের জানা ছিল। যশোরে উনার সন্ধান পাওয়ার পর জানতে পারি, কামরাঙ্গির চর থানাতেও তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে একটি মামলা আছে। কিন্তু ওই মামলাটা কে করেছে তা আমার জানা নাই।’

জুলিয়া ফেরদৌসী জানান, দুইমাস পর নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান পাওয়ায় তিনি যেমন উৎফুল্ল হয়েছিলেন, এখন ঠিক ততোটাই উদ্বিগ্ন বোধ করছেন। স্বামীর পাশাপাশি এই উদ্বেগ সন্তানের জন্যও । করোনা দূর্যোগে অচেনা যশোর এলাকায় ছেলে কী করছে, কী খাচ্ছে আর কোথায় থাকছে- এ নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

সাংবাদিক কাজলে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম জানান, ৫৪ ধারার মামলাতেই আদালতের নির্দেশে শফিকুল ইসলাম কাজল কারাগারে আছেন।ভারত ফেরত বলে তাকে কারাগারে বিশেষ ব্যবস্থায় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে শুনেছি। ঢাকা থেকে তার বিরুদ্ধে দায়ের অন্য মামলার কাগজপত্র এসে পৌছালে আদলাত পরবর্তী নিদের্শনা দেবে। তবে কাজলের পরবর্তী জামিন শুনানি কবে হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তা।

Check Also

জিল্লুর রহমানের বাড়িতে পুলিশের হানা, যা বললেন জিল্লুর রহমান

জনপ্রিয় টক শো ‘তৃতীয় মাত্রা’র উপস্থাপক ও পরিচালক জিল্লুর রহমান এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, পুলিশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *