ই-অরেঞ্জর লুটের ১১০০ কোটি টাকাই ব্র্যান্ড এম্বাসেডর মাশরাফির ৫০০ কোটির উৎস?

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ এর কারণে সমালোচনায় জড়ানো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার মিরপুরের বাসভবনের সামনে বিক্ষুব্ধ ও প্রতারিত গ্রাহকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। এসময় তারা মাশরাফির সাথে আলোচনার দাবি জানান।
সোমবার সন্ধ্যার পর ই-অরেঞ্জ এর গ্রাহকরা বিচ্ছিন্নভাবে মিরপুর সাড়ে এগারোস্থ রোডে অবস্থিত মাশরাফির বাসভবনের সামনে জড়ো হয়। এটি মূলত মাশরাফির ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানির গুলশান-১ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ই-অরেঞ্জের প্রতারিত গ্রাহকরা। রাস্তা বন্ধ করে মিছিল ও স্লোগানের কারণে এসময় রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এরপর তারা সেখান থেকে মিরপুরস্থ মাশরাফির বাসার দিকে রওনা হন।
ই-অরেঞ্জ এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাশরাফি সম্প্রতি এই দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ঘোষণা দেন, তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সাথে আর যুক্ত নন।

কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগ, মাশরাফিকে দেখেই তারা ই-অরেঞ্জ এর উপর আস্থা এনেছেন এবং পণ্য ক্রয়ের জন্য অর্থ নিয়েছেন। এখন মাশরাফি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলে তাদের পণ্য বা অর্থ প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

এদিকে করোনার কারণে চলা কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ই-অরেঞ্জ গোপনে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বিক্রি করে দেয় অন্য গ্রুপের কাছে। এতে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ সোমবার ফেসবুকে নিজেদের অফিসিয়াল পেজে দেয়া এক পোস্টে ই-অরেঞ্জও জানায়, মাশরাফির সঙ্গে এখন আর তাদের কোন সম্পর্ক নেই।

তারা জানায়, ই-অরেঞ্জ.সপ এর সকল সম্মানিত গ্রাহকদের জানানো যাচ্ছে যে, ই-অরেঞ্জ.সপ এর সাথে পহেলা জুলাই, ২০২১ হতে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সাথে চুক্তি শেষ হয়েছে। তাই আমাদের অফিসিয়াল কোনো বিষয়ে তিনি কোনোভাবেই অবগত নন এবং তিনি অফিসিয়ালভাবে কোনো কিছুই আপডেট দিতে পারবেন না। আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি তাদের কাছে যারা পণ্য অর্ডার করেছেন, কিন্তু এখনো পণ্য হাতে পাননি।
এরপরই রাস্তায় নামে গ্রাহকরা। মাশরাফির বাড়ির সামনে হাজির হওয়া ই-অরেঞ্জ গ্রাহকদের নিয়ন্ত্রণ করতে এসময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হতে দেখা যায়।

ই-অরেঞ্জ প্রতারণা ও তারকাদের দায়বদ্ধতা

প্রতারণা আমাদের দেশে একটা শিল্পে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন পরপরই নতুন নতুন প্রবঞ্চক ও প্রতারক চক্রের অভিনব সব অপকর্ম ফাঁস হতে দেখা যায়, এবং একইসাথে ভুক্তভোগীদের অসহায়ত্বও প্রকট হয়ে উঠে। এমনই এক প্রতারণা গল্প এখন বাতাসে ভাসছে। নব্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ গ্রাহকদের সুলভ কিস্তিতে, এবং সস্তা মূল্যে পণ্য বিক্রয়ের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনাকে ঘিরে গুলশান থানার পরিদর্শক সোহেল রানার জীবনের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্যও বেরিয়ে আসছে।
ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, ও মামলা-মোকদ্দমা শুরু হতেই এই প্রতারক পুলিশ পরিদর্শক দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। তবে গা ঢাকা দেয়ার আগেই ভারতীয় সীমান্তবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যান তিনি।

পরিদর্শক সোহেল রানা যেন বাস্তব কোন চরিত্র নন, তিনি যেন সিনেমার কোন কুশীলব। তিনি থানার একজন পরিদর্শক হলেও জীবন-যাপন করতেন রাজকীয় হালে। দায়িত্ব পালনে নিয়মকানুনের কোন ধার ধারতেন না। নিজের খেয়াল খুশি মতো তিনি কখনো থানায় আসতেন, কখনো থানায় আসতেন না। দিনের বেলা তার ভালো লাগে না, তিনি আসেন রাতের বেলা। থানার কোন গাড়িও তিনি ব্যবহার করেন না। তিনি নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করেন। ব্যয়বহুল গাড়ি। উপরমহলে তার যোগাযোগ ছিল অত্যন্ত শক্ত। তাই তো তিনি ঘুরেফিরে গুলশান-বনানী এলাকাতেই প্রায় ১০ বছর চাকরি করছেন। মাঝখানে একবার ডিবিতে বদলি হলেও আবার গুলশানে ফিরে আসেন। তিনি ভিসা সিন্ডিকেট, গুলশান এলাকার অবৈধ নানা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন বলেও অভিযোগ আছে।

তার সম্পদের পরিমাণ পাহাড় প্রমাণ। ঢাকায় অন্তত চারটি ফ্ল্যাট আছে। একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আছে। খাগড়াছড়িতে রিসোর্টের জন্য জায়গা কিনে রেখেছেন। থাইল্যান্ডের পাতায়াতে জমি ও ফ্ল্যাটের পাশাপাশি হিলটন হোটেলের পাশে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে প্রায় ৫০০ বিঘা জমির মালিক তিনি। তার সহকর্মিরাও তার এই বিপুল অর্থ সম্পত্তির খবর শুনে হতবাক হয়েছেন। তারাও নাকি এতোদিন তার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। কি আশ্চর্য ব্যাপার। পুলিশের ঘরেই চোর বাটপারের বাস, অথচ তারা বাস করতেন ধোঁয়াশার ভেতর। পুলিশের এই অপরিপক্কতার দায়ভার এখন কে নেবে? সাধারণ মানুষ কার ওপর আস্থা রাখবে?

দেশে ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাট যে কী ভয়ঙ্কর পর্যায়ে উপনীত হয়েছে তার সামান্য নমুনা হয়তো এই সোহেল রানা। তিনি বছরের পর বছর ধরে পুলিশের পদ ব্যবহার করে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, অথচ তার সহকর্মী, তত্ত্বাবধায়করা কিছু জানেন না, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি বছরের পর বছর একই এলাকায় চাকরি করে যাওয়া, দিনের পর দিন অফিস ফাঁকি দেওয়ার ঘটনাটিও ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। হ্যাঁ, তিনি সব কিছু ‘ম্যানেজ’ করেছেন, কিংবা করতে পেরেছেন। দেশে এখন ঘুষ-দুর্নীতি, লুটপাটের ঘটনাগুলো এভাবে কিছু ব্যক্তিকে ‘ম্যানেজ’ করেই করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সম্ভবত সরকারের আর কিছু করার নেই। ইচ্ছেও হয়তো নেই।
ই-অরেঞ্জের এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। তিনি ছিলেন এই প্রতারক প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড অ্যাম্বসেডর। তাঁর তারখাখ্যাতিকে কাজে লাগিয়ে ধুর্ত এই প্রতিষ্ঠানটি খুব সহজেই নিরীহ গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।ভুক্তভোগী গ্রাহকরা দাবি করেছেন যে, এই ক্রিকেটারের কথা শুনেই তারা প্রতিষ্ঠানটি থেকে পণ্য কেনার জন্য টাকা দিতে আগ্রহি হয়েছেন। এজন্য সাবেক এই জনপ্রিয় ক্রিকেট অধিনায়কের ওপরও তারা বেশ ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট। ইতোমধ্য মাশরাফির পল্লবী’র বাসার সামনে তারা বিক্ষোভও করেছে। ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোন সুরাহা না পেলে তারা মাশরাফির বাসা ঘেরাও করবে বলেও জানিয়েছে।

মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমেই তারকারা খ্যাতি অর্জন করেন এবং জনমানসে তাঁদের যে ইমেজ বা ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে, তার সর্বোচ্চ আর্থিক মূল্য আদায় ও ভোগ করা তাঁদের ন্যায্য অধিকার। সুতরাং তাঁরা বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে অথবা কোনো পণ্য, পরিষেবা বা ব্র্যান্ডের প্রচার-প্রসারে অংশ নিলে আপত্তির কিছু নেই, এবং এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো আইনগত বাধাও নেই। ভোগ্যপণ্য বিপণনের নতুন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জ ও ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের আকর্ষিত করার জন্য তারকাদের জনপ্রিয়তাকে খুব সহজেই তাই কাজে লাগাতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ভালো-মন্দ দিকটা তারকারা তাদের ব্যক্তিজীবনের ব্যস্ততার মধ্যে কতোটা গুরুত্বের সঙ্গে বিচার বিবেচনা করে থাকেন তা আসলে বোঝা মুশকিল।

তারকাদের প্রতি সাধারণ মানুষের একটা বিশেষ দুর্বলতা আছে। মানুষের হৃদয়ে তাদের একটা আলাদা অবস্থান রয়েছে। তাদেরকে ভালবাসে, অনুসরণ করে বলে তাদের কথাকে তারা গুরুত্ব দেয় প্রবলভাবে। কোন পণ্যের সাথে তাদের সংশ্লিষ্ট মানে হলো ওই পণ্যের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়ে যাওয়া। কাজেই, তারকাদের এই দিকটার প্রতি মনোযোগী হওয়া খুব জরুরি। তার কোন পণ্যের প্রচার করছেন, পণ্যটি কোন প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করছে, জনগণের জন্য তা কল্যাণকর কিনাÑএসব বিষয় অবশ্যই তাদের ভালভাবে যাচাইবাছাই করা উচিত। শুধু টাকা উপার্জনের জন্য তারা যে কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে তারা তাদের তারকাখ্যাতিকে ব্যবহার করতে পারেন না। আদর্শ ও নীতির জায়গায় তাদেরকে অনড় থাকতে হবে। অন্যথায় তা শুধু সাধারণ মানুষের জন্য দুঃখ বয়ে আনবে না, তাঁরা নিজেরাও সমস্যার বেড়াজালে আটকে পড়বেন। তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে। মাশরাফি বিন মর্তুজাই এটির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

এ ধরনের ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের তারকারা এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। বিজ্ঞাপনে মিথ্যাচার কিংবা অসত্য তথ্য দিয়ে গ্রাহক বা ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য, এবং
জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্যের প্রচার-প্রসারে অংশ নেওয়ার কারণে বহু তারকা সমালোচিত হয়েছেন। ভোক্তার জন্য ক্ষতিকর ও আইনে নিষিদ্ধ হওয়ার কারণেই এখন আর কেউ বিড়ি, সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপনে অংশ নেন না কিংবা শুভেচ্ছাদূত হন না।
২০১৬ সালেই ভারতে একটি নুডলস কোম্পানির বিজ্ঞাপন করার জন্য অমিতাভ বচ্চন, প্রীতি জিনতা ও মাধুরী দীক্ষিত ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। কারণ তাদের প্রচারকৃত ওই নুডলসে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গিয়েছিল। ভারতজুড়ে শুরু হয়েছিল তুমুল হইচই। ভারতের তখনকার আইনমন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলি তখন ক্ষতিকর ওই পণ্য অনুমোদনকারী ও প্রচার-প্রসারে সহায়তাকারী তারকাদের ব্যক্তিগত দায় নির্ধারণ ও সাজার বিধান করে আইন প্রস্তাব করেন। অন্যদিকে, চীনে এমন আইন ছিল যে কোনো তারকা পণ্যের বিজ্ঞাপন করতে চাইলে তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে সেই পণ্য ব্যবহার করে এর গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে, অন্যথায় তাকেও এর দায়ভার গ্রহণ করতে হবে।
২০১৬ সালের ওই ঘটনার পর ভারতে ভোক্তা সুরক্ষা আইন পাস হয় ২০১৯ সালে। ওই আইনের ৮৯ ধারায় প্রস্তুতকারক এবং সেবা প্রদানকারীর মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনে ভোক্তার ক্ষতির জন্য দুই বছরের জেল ও ১০ লাখ রুপি জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। অপরাধের পুনরাবৃত্তির বেলায় প্রতিবারের জন্য সাজা বাড়বে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা ৫০ লাখ রুপি।

বাংলাদেশে ভোক্তা সুরক্ষা আইন অবশ্য ভারতেরও অনেক আগে পাস হয়। ২০০৯ সালে। ভোক্তাস্বার্থ সুরক্ষা আইন ২০০৯-এর ৪৪ ধারায় মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের প্রতারণার সাজা এক বছরের জেল কিংবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান রাখা হয়েছে। ওই আইনে ভোক্তাস্বার্থ সুরক্ষায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নামে একটি দপ্তরও প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তারা এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ই-কমার্স নির্দেশিকা মেনে চলার নির্দেশনাও দিয়েছে। তবে ভারত ও বাংলাদেশের আইনে বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ ও পণ্য বা সেবা অনুমোদন অথবা সুপারিশের জন্য তারকাদের ব্যক্তিগত দায় নির্ধারণ করা নেই। সম্ভবত এ কারণেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা বা তার বর্ণিত গুণাগুণের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই ছাড়াই আমাদের তারকারা সেগুলোর প্রতিনিধিত্ব করাতে রাজি হয়ে যান। তাদের তো কোন ভয় নেই। আশ্চর্য ব্যাপার হলো এসব শঠ প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থেকে, তাদের পণ্যের প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা রাখার পরও তারকারা ভুক্তভোগীদের কাছে কোন দুঃখ প্রকাশ করেন না। তাদের যেন কোন দায় নেই।

আমাদের দুয়ার যেহেতু আলগা, তাই চোর বারবার ঢুকছে। আইন যদি কঠোর হতো, বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া অন্যায়, অনিয়ম, প্রতারণার যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হতো তাহলে হয়তো এই ধরনের ঘটনা এত পুনঃপুনঃ ঘটতো না। অসাধু ব্যবসায়ী বা কথিত উদ্যোক্তারা আমাদের আইনগত দুর্বলতা এবং আইন প্রয়োগে শৈথিল্য ও প্রশাসনের দুর্নীতির সুযোগ কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে সম্পর্কে খোঁজখবর ও প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামেন। তাদের এই ধরণের অপকর্ম সম্পর্কে উপরমহলের অনেকেই যে আগে থেকে ওয়াকিবহাল থাকে না এ ব্যাপারেও সন্দেহ থেকেই যায়। তাদের মনে একটা ধারণা বদ্ধমূল আছে যে, যতই অপকর্ম তারা করুক না কেন আইনের ফাঁক ফোকর গলে তারা ঠিকই বের হয়ে আসবে।

এই ধরণের অন্যায়, অপতৎপরতা, প্রবঞ্চনা থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে হলে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা ছাড়া কোন বিকল্প পথ নেই। কিন্তু এখানেই তো আমাদের সনস্যা। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছাতার সংকট সর্বত্র। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদেরকেই সজাগ হতে হবে। আমাদের তারকারা যদি কিছুটা সতর্ক হন, ভক্ত ও গুণগ্রাহীদের প্রতি দায়িত্বশীল হন, তাহলে হয়তো কিছুটা পরিবর্তন সম্ভব। তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের যেমন নিখাদ ভালবাসা আছে, সাধারণ মানুষের কল্যাণের দিকটাও তাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে ঠিক ততোটাই আন্তরিকতার সাথে।

তাহসিনুল ইসলাম : কথাশিল্পী

Check Also

জিল্লুর রহমানের বাড়িতে পুলিশের হানা, যা বললেন জিল্লুর রহমান

জনপ্রিয় টক শো ‘তৃতীয় মাত্রা’র উপস্থাপক ও পরিচালক জিল্লুর রহমান এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, পুলিশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *