যশোরের মনিরামপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (১০ টাকার চাল) নতুন কার্ড তৈরির নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডিলারের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ করা হচ্ছে, উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নের ডিলার সবুজ বিশ্বাস নতুন কার্ড তৈরি করতে ৫১২ জন উপকারভোগীর কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নিয়েছেন। সবুজ বিশ্বাস হরিদাসকাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। তিনি ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদ্য পরাজিত চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ের অনুসারী। ২-৩ মাস আগে সবুজ বিশ্বাস নতুন কার্ড দেওয়ার নামে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। চেয়ারম্যানের অনুসারী হওয়ায় কার্ড হারানোর ভয়ে উপকারভোগীরা এ অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও উপজেলা খাদ্য অফিস বিনামূল্যে নতুন এ সব কার্ড বিতরণ করার কথা।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) কয়েকজন উপকারভোগীর সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
হরিদাসকাটি ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর প্রণব বিশ্বাস শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুকে এ অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেন, ডিলার সবুজ গেল অক্টোবর মাসে হরিদাসকাটি ইউনিয়নের ৫, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৫১২ জন ভাতাভোগীদের কাছ থেকে মাত্র তিন ঘন্টায় ২০০ টাকা করে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ডিলারের বিচার দাবি করেছেন তিনি।
এদিকে নতুন কার্ড বিতরণে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ডিলার সবুজ। তিনি দাবি করেন ২০০ টাকা না অফিস খরচ হিসেবে ৫০ টাকা করে নিয়েছি।
কুচলিয়া গ্রামের করুনা বিশ্বাস বলেন, আমার ১০ টাকার চালের কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ডিলার সবুজ বলিল নতুন কার্ড করতি টাকা লাগবে। এই বলে আমার কাছ থেকে ২০০ টাকা নেছে।
লেবুগাতি গ্রামের কবিতা বিশ্বাসের ছেলে মৃত্যানন্দ বিশ্বাস বলেন, আমার মায়ের নামে চালের কার্ড আছে। নতুন কার্ডে ডিলার সবুজ ২০০ করে টাকা নেছে। গরীব-গুরব, বুড়ো-হাড়া কিচ্ছু দেখিনি।
তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। চাল কিনে খাতি পারব না। যদি আর চাল না পাই এ ভয়ে ২০০ টাকা দিছি। একই অভিযোগ উপকারভোগী অনেকেরই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার সবুজ বিশ্বাস বলেন, নতুন কার্ড করাতে খাদ্য অফিস লেখা খরচ বাবদ আমাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নিয়েছে। আমিও উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নিয়েছি। ৫০ জনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ায় পর এসব নিয়ে কথা ওঠে। তখন আমি বাকিদের অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাঁদের বলেছি, নিজেদের যেয়ে কার্ড করে আনতে।
সবুজ বিশ্বাস বলেন, আমি নৌকা করি। ইউনিয়নের ভোটে নৌকা হেরে গেছে। এ জন্য এখন এসব কথা উঠছে। উপকারভোগীদের ভয় দেখাচ্ছে। কার্ড থাকবে না। এ ভয়ে তাঁরা ২০০ টাকা করে নেওয়ার কথা বলছেন।
২০১৬ সালে অস্বচ্ছল দুস্থদের জন্য ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ‘ হিসেবে ১০ টাকা মূল্যে মাসিক ৩০ কেজি করে চালের কার্ড চালু করে সরকার। এ চাল বিতরণের জন্য ইউনিয়নপ্রতি ৩-৪ জন করে ডিলার নিয়োগ করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ দপ্তর। কার্ড প্রতি ৩০০ টাকা দিয়ে বছরে ৬ মাস এ চালের সুবিধা পান উপজেলার ২৭ হাজারের বেশি পরিবার। পাঁচ বছর আগে সরবরাহ কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে আবার কার্ড বিতরণ করছে উপজেলা খাদ্য দপ্তর।
মনিরামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিত সাহা বলেন, খাদ্য বান্ধবের নতুন কার্ডের জন্য চাহিদাপত্র দিয়ে বরাদ্দ আনতে হয়। আমরা এখনো বরাদ্দ পাইনি। একটা কার্ড করাতে ৮-১০ টাকা খরচ হয়। অফিসেও লোকবল কম।
তিনি বলেন, আমার অফিস ৫০ টাকা করে নেওয়ার কথা না। ডিলাররা ২০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন। আমি ডিলারদের ফোন করে টাকা নিতে নিষেধ করেছি। এ কর্মকর্তা বলেন, ডিলার সবুজের কার্ডপ্রতি ২০০ টাকা নেওয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
Leave a Reply