বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য নাহিদ সুলতানা তৃপ্তিকে নৌকা দেওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি বিএনপি ঘরানার বলে অভিযোগ উঠেছে। তার মনোনয়ন বাতিল চেয়ে ও মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা আবদুল মোমেন তালুকদার খোকার হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদানের ছবি দিয়ে পোস্টারিং করা হয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য রায়হান উদ্দিন স্বপন মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করেছেন। শিগগিরই মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি চলছে। অবিলম্বে তৃপ্তির মনোনয়ন বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়েছে; অন্যথায় এ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-এলাহী কাজল জানান, নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য। বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এরশাদুল হক টুলু, যুগ্ম সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম চম্পা, ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি ও নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড তৃপ্তিকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। তবে মনোনয়ন বঞ্চিতরা প্রতিবাদ করতে পারেন।
সান্তাহার ইউনিয়নে নৌকা মার্কার প্রার্থী তৃপ্তি দাবি করেন, তিনি আওয়ামী ঘরানার। বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য। তিনি কোনোদিন বিএনপির রাজনীতি করেননি। প্রধানমন্ত্রীর পদক পাওয়ার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা খোকা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।
চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, তিনি কোনদিন বিএনপিতে যোগদান করেননি। প্রতিপক্ষরা তাকে নিয়ে মিথ্যাচার করছেন।
সান্তাহার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন বঞ্চিত দীর্ঘ ৪০ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম চম্পা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ১৯৮২ সাল থেকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন। তার মা ১৯৮৪ সালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউপি সদস্য ছিলেন। তারা তিন ভাই দীর্ঘ ২১ বছর আদমদীঘি উপজেলায় আওয়ামী লীগে নেতৃত্বে ছিলেন।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের সময় তার পরিবারের সাত সদস্যকে সরকারি চাকরিজীবীকে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছিল। অথচ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য নাহিদ সুলতানা তৃপ্তিকে সান্তাহার ইউনিয়নে নৌকা দেওয়া হয়েছে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নেত্রী শেখ হাসিনা তার সিভি দেখলে অবশ্যই তাকে মনোনয়ন দিতেন। মধ্যস্বত্বভোগীরা তাকে মনোনয়ন বঞ্চিত করেছেন।
সান্তাহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য রায়হান উদ্দিন স্বপন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো আবেদনে উল্লেখ করেছেন, তার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রাপ্ত নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি ‘হাইব্রিড’ হিসেবে পরিচিত। গত ২০১৬ সালের ওই ইউনিয়নের নির্বাচনে তৃপ্তি বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মোজাহার হোসেন পিন্টুর পক্ষে কাজ করেন। পিন্টু মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা আবদুল মোমেন তালুকদার খোকার শ্যালক।
এছাড়া তৃপ্তি গত ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খোকার হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদানকারী। তিনি (স্বপন) তৃপ্তির মনোনয়ন বাতিল করে আওয়ামীপ্রেমী কাউকে প্রার্থী করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়া ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নে সাবেক ফ্রিডম পার্টির নেতা আবদুল হক আবুকে নৌকা দেওয়াতেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
Leave a Reply