পৃথিবীর সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলেও মা কখনো সন্তানকে ফেলে দেয় না। সন্তান যত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থাকুক না কেনো, তার পাশে মা সব সময় থাকেন। নিজে হাজার কষ্টের মাঝে থাকলেও সন্তানের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারলে সকল দুঃখ ভুলে যান। এ জন্যই হয়তো সৃষ্টিকর্তা গর্ভধারণের সক্ষমতা দিয়ে নারীদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
mother sold hair
যুগে যুগে সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসার এমন অজস্র উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। সম্প্রতি দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। এক মা তার অভুক্ত সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য নিজের মাথার চুল বিক্রি করে দিয়েছেন। মাত্র ১৫০ টাকার বিনিময়ে এই চুল বিক্রি করে সন্তানদের খাবারের ব্যবস্থা করেন।
জানা যায়, প্রেমা সেলভাম নামের ওই নারী স্বামীর মৃত্যুর আগে তামিলনাড়ুর একটি ইটভাটায় কাজ করতেন। স্বামী-স্ত্রী দুইজনের আয়ে সুন্দরভাবে সংসার চলছিল। কিন্তু তাদের স্বপ্ন আরো অনেক বড় ছিল। তাই নিজেই একটি ইটভাটা করার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নেন প্রেমার স্বামী। পরে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারার হতাশায় একদিন আত্মহত্যা করেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর প্রচণ্ড ঋণের চাপে পড়েন প্রেমা। সঙ্গে ছিল তিন শিশু সন্তানসহ নিজের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা। তাই একপর্যায়ে পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধের চাপে শিশু সন্তানদেরও নিজের সঙ্গে কাজে ঢুকিয়ে দেন তিনি।
বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার দুঃখ-কষ্টের করুণ গল্প। প্রেমা সেলভাম বলেন, কাজে গেলে দৈনিক ২০০ রুপি করে মজুরি দেয়া হয়। এতে সুন্দরভাবেই দিন অতিবাহিত হচ্ছিল। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাজে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। কারণ অসুস্থতার কারণে ইটের ভার বহন করা সম্ভব ছিল না। তাই বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় থাকতে হতো।
তিনি বলেন, ‘সে সময় প্রায় তিন মাস অসুস্থ ছিলাম। ঋণের টাকা জমে যাচ্ছিল, সেইসঙ্গে বাড়িতে খাবারও শেষ হয়ে যায়। একদিন স্কুল থেকে ফিরে সাত বছরের ছেলে কালিয়াপ্পান খাবার চাইলো। খাবার দিতে না পারায় সে কান্না করে দিলো। তখন বিক্রি করার মতো ঘরে কোনো সম্পদ, গয়না বা মূল্যবান কিছু ছিল না।’
‘হঠাৎ মনে হলো একটা জিনিস আছে, যা বিক্রি করে তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়া যাবে। তখন পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে গিয়ে ১৫০ রুপির বিনিময়ে মাথার চুলগুলো বিক্রি করে দেই এবং সন্তানদের জন্য খাবার কিনে আনি’, যোগ করেন প্রেমা সেলভাম।’
তিনি বলেন, ‘এটা সামান্য অর্থ হলেও তা তখন আমার জন্য অনেক বড় কিছু ছিল। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য এটা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু এই ব্যবস্থা ছিল সেদিনের জন্য। পরের দিন কীভাবে খাবারের ব্যবস্থা করা যায় তা আমাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। কয়েকটি দোকানে গেলেও তারা আমার কাছে কিছুই বিক্রি করলেন না। পরে বাড়ি ফিরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেই। তখন বোন এসে রক্ষা করেন।’
mother sold hair1
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এর কিছু দিন পর স্থানীয় একটি ইটভাটার মালিকের বন্ধু বালা মুরুগান ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পারেন। সব কিছু শুনে তার জীবনে ঘটে যাওয়া এমন কঠিন সময়ের কথা মনে পড়ে যায়। তার যখন ১০ বছর বয়স ছিল, তখন বালার পরিবারেও কোনো খাবার ছিল না। সে সময় পুরনো বই এবং সংবাদপত্র বিক্রি করে সংসার চালিয়েছিলেন তার মা। একপর্যায়ে সন্তানসহ নিজেকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। যদিও পরবর্তীতে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
Leave a Reply