যুক্তরাষ্ট্রে একবছরে পুলিশের গুলিতে নিহত এক হাজারের বেশি

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

জর্জ ফ্লয়েড, গত ২৫ মে পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে আটক করেছি। তিনি বারবার পুলিশকে বলছিলেন যে, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না’
আমেরিকায় নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পর একজন পুলিশ অফিসার হাঁটু দিয়ে তার গলা চেপে ধরার পর ওই ব্যক্তির মৃত্যু দেশটিতে সংখ্যালঘু বর্ণ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পুলিশের নৃশংসতাকে আবার সামনে এনেছে।

মিনিয়াপোলিস অঙ্গরাজ্যের একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন ৪৬ বছর বয়স্ক জর্জ ফ্লয়েড। গত ২৫ মে সন্ধ্যায় সন্দেহভাজন একটি প্রতারণার ব্যাপারে কল পেয়ে পুলিশ তাকে ধরে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, জর্জ ফ্লয়েড নিঃশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারকে বলছেন, ‘আমি নি”শ্বাস নিতে পারছি না’।

এই ঘটনা যেদিন ঘটে সেদিনই আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেটি ছিল নিউইয়র্কে এক শ্বেতাঙ্গ নারীর পোষা কুকুর নিয়ে তুচ্ছ একটা বিতর্কের জেরে পুলিশ ডাকার এবং এর জন্য পুলিশের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ওপর চড়াও হবার ঘটনার।

পুলিশের গুলিতে ২০১৯ সালে মারা গেছে এক হাজারের বেশি

ফ্লয়েডের মৃত্যু আমেরিকায় পুলিশের হাতে মৃত্যুর ঘটনার উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান সামনে এনেছে। ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন ১০১৪ জন এবং বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান।

ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স নামে একটি বেসরকারি সংস্থার চালানো জরিপে দাবি করা হয়েছে যে, আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তিনগুণ বেশি মারা যান কৃষ্ণাঙ্গরা।

দেশটিতে পুলিশি নির্মমতার প্রতিক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠেছে # BlackLivesMatter (কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনওমূল্যবান) নামের আন্দোলন। গায়ক বিয়োন্সে, বাস্কেটবল খেলোয়াড় লেব্রন জেমসের মতো তারকারা এই আন্দোলনকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন।

আমেরিকায় পুলিশের নৃশংস আচরণে মৃত্যুর যেসব ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো:

ট্রেইভন মার্টিন, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২

ট্রেইভন মার্টিন ছিল ১৭ বছর বয়সী একজন কৃষ্ণাঙ্গ স্কুলছাত্র। ফ্লোরিডার স্যানফোর্ডে জর্জ জিমারম্যান নামে একজনের গুলিতে সে প্রাণ হারায়।

মার্টিন একটি ঘেরা এলাকায় তার আত্মীয়দের সঙ্গে যখন দেখা করতে ঢোকে, তখন ওই এলাকার একজন স্বেচ্ছাসেবক চৌকিদার হিসপ্যানিক জর্জ জিমারম্যান তাকে বাধা দেন।

জুরি ২০১৩ সালে জিমারম্যানকে নির্দোষ বলে রায় দেয়। আমেরিকান আইনে জিমারম্যান বলতে পেরেছিলেন যে আত্মরক্ষার স্বার্থে তিনি গুলি চালিয়েছিলেন এবং সেটাই এই মামলায় তার পক্ষে যায়। কিন্তু তরুণ ট্রেইভনের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবরা সবসময় বলে এসেছেন জিমারম্যান তাকে খু'ন করেছে। এই হ'ত্যার ঘটনা থেকেই জন্ম নেয় ‘কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান’ নামের সামাজিক আন্দোলন।

এরিক গার্নার, ১৭ জুলাই ২০১৪

এরিক গার্নার মারা যান নিউইয়র্কে দম বন্ধ হয়ে। খুচরা সিগারেট অবৈধভাবে বিক্রি করছেন এই সন্দেহে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ওই ঘটনার ফুটেজে দেখা যায়, গার্নার বারবার কান্নাজড়ানো গলায় আকুতি করছেন, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না’। আর একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ, ড্যানিয়েল পান্টালিওকে দেখা যায়, তার হাত দিয়ে গার্নারের গলা টিপে ধরে আছেন এমনভাবে যাতে তিনি দম নিতে না পারেন। দুজনেই মাটিতে ধ্বস্তাধ্বস্তি করছেন।

ওই রাজ্যের গ্র্যান্ড জুরি রায় দেন পুলিশ অফিসার পান্টালিওর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আনা হবে না। এ ঘটনার পর আমেরিকার বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। ঘটনার পাঁচ বছর পর নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

মিসৌরিতে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের সঙ্গে ১৮ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউনের এক বাদানুবাদের জেরে ওই পুলিশ অফিসারের গুলিতে নিহত হন ব্রাউন। এই ঘটনার পর ‘কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান’ আন্দোলন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও সামনে আসে।

মিসৌরির ফার্গুসন এলাকার ওই ঘটনার পর সহিংস বিক্ষোভ হয়, যে বিক্ষোভে মারা যান এক ব্যক্তি, আহত হন অনেক এবং কয়েকশ লোককে ধরপাকড় করা হয়।

ওই বছরই নভেম্বর মাসে জুরি পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত নাকচ করে দেবার পর আবার প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলে এবং উইলসন পুলিশ বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন।

ওয়াল্টার স্কট, ৪ এপ্রিল ২০১৫

দক্ষিণ ক্যারোলাইনার নর্থ চালর্সটনের ৫০ বছর বয়স্ক কৃষ্ণাঙ্গ এক ব্যক্তি ওয়াল্টার স্কট যখন পুলিশ অফিসার মাইকেল স্ল্যাগারের কাছ থেকে ছুটে পালাচ্ছিলেন তখন তাকে পিঠে তিনবার গুলি করা হয় এবং মারা যান স্কট।

স্কটের গাড়ির ব্রেকের একটা আলো ভেঙে গিয়েছিল এবং পুলিশ তার গাড়ি থামিয়েছিল। স্কট তার সন্তানের খোরপোশের অর্থ দিতে দেরি করায় তখন তার নামে পুলিশের একটা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। স্কট গ্রেফতার এড়াতে দৌড় দেন।

পুলিশ অফিসার স্ল্যাগারের বিশ বছরের কারাদণ্ড হয় ২০১৭ সালে। নর্থ চালর্সটন কর্তৃপক্ষ ওয়াল্টার স্কটের পরিবারকে ক্ষতিপূরণবাবদ ৬৫ লাখ ডলার দেয়।

ফ্রেডি গ্রে, ১২ এপ্রিল ২০১৫

পুলিশের গুলিতে ওয়াল্টার স্কটের মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে আরেকটি বিতর্কিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পঁচিশ বছর বয়সী ফ্রেড গ্রে-র পকেটে একটি ছুরি পাবার পর অস্ত্র বহন করার দায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

একজন প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ভ্যানে তোলার সময় গ্রে আর্তচিৎকার করছেন। কয়েক ঘন্টা পর তাকে মেরুদণ্ডের গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এক সপ্তাহ পর গ্রে মারা যান। এ ঘটনার পর ব্যাপক সহিংস প্রতিবাদ হয়, যাতে অন্তত ২০জন পুলিশ অফিসার আহত হন।

কিন্তু গ্রে-কে গ্রেফতার করার সঙ্গে জড়িত ছয়জন পুলিশ অফিসারের মধ্যে যে তিনজনকে আদালতে হাজির হতে হয়েছিল তারা নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং বাকি তিনজনকে কখনও অভিযুক্তই করা হয়নি।

সান্ড্রা ব্ল্যান্ড, ১৩ জুলাই ২০১৫

টেক্সাস রাজ্য পুলিশ বাহিনীর সদস্য ব্রায়ান এনসিনিয়া ট্রাফিক আইন লংঘনের ছোটখাট এক অভিযোগে ২৮ বছর বয়স্ক সান্ড্রা ব্ল্যান্ডের গাড়ি থামায়।

পুলিশ যখন তার দিকে আসছিল সান্ড্রা তখন একটা সিগারেট ধরিয়েছিলেন। সান্ড্রা সিগারেট নিভিয়ে ফেলতে অস্বীকার করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশ অফিসারের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়।
তিনদিন পর কারাগারে আত্মহ'ত্যা করেন সান্ড্রা।

সান্ড্রা ব্ল্যান্ড পুলিশের হাতে মারা না গেলেও তার মৃত্যুতে আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ হয়।

তার ঘটনায় #সেহারনেম নামে আরেকটি জনপ্রিয় আন্দোলন হয়, যে আন্দোলনের মাধ্যমে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা কীভাবে পুলিশি নির্মমতার শিকার হচ্ছেন সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস নেয়া হয়।

আতাতিয়ানা জেফারসন, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

ডালাসের ফোর্থ ওয়ার্থে ২৮ বছর বয়সী আতাতিয়ানা জেফারসনকে তার নিজের শোবার ঘরে গুলি করেন পুলিশ অফিসার অ্যারন ডিন।

জেফারসনের সদর দরোজা খোলা আছে এ কথা জানিয়ে পুলিশকে ফোন করে তার এক প্রতিবেশী এবং পুলিশ অফিসার অ্যারন ডিনকে সেখানে পাঠানো হয়। ডিন তার শোবার ঘরের জানালা দিয়ে তাকে গুলি করে।

তার বিরুদ্ধে হ'ত্যার অভিযোগ আনা হয়। তবে এখনও তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি।

ব্রেওনা টেলর, ১৩ মার্চ ২০২০

ব্রেওনা ২৬ বছর বয়সী জরুরি চিকিৎসাবিষয়ক একজন প্রকৌশলী, ১৩ মার্চ লুইভিলের কেন্টাকিতে তার ফ্ল্যাটে ঢুকে পুলিশ অফিসাররা তাকে আটবার গুলি করে।

তারা ওই বাসায় অবৈধ মাদক আছে এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালাতে গিয়েছিল। অনুসন্ধানের জন্য তাদের কাছে পরোয়ানা ছিল। কিন্তু ব্রেওনার ফ্ল্যাটে কোনো মাদক পাওয়া যায়নি।

ব্রেওনা টেলরের পরিবারের ধারণা তারা ব্রেওনাকে খুঁজছিল না। কিন্তু তারা খুঁজছিল এমন এক সন্দেহভাজনকে যার সাথে ব্রেওনার কোনোই সম্পর্ক ছিল না এবং সেই সন্দেহভাজন তখন পুলিশি হেফাজতেই ছিল। সেই ব্যক্তি কখনই ওই ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দা ছিল না।

লুইভিলের পুলিশ জানায়, একজন পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে তারা পাল্টা গুলি চালায়। ওই গুলিতে একজন পুলিশ আহত হয়েছিল বলে তারা জানায়।

Check Also

এরদোগানবিরোধী প্রচারণায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইকোনোমিস্ট

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ১০ দিন আগে প্রকাশিত ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনোমিস্ট কভার পেজসহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *