নাসিমের যে ছবি আন্দোলনে আগুন জ্বালিয়েছিল

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ এর পর জেল হ'ত্যাকাণ্ডে বাঙালি হারান তাদের চার জাতীয় নেতাকে। আর নাসিম হারান তার পিতা। এসবের পর নাসিমকে রাজনীতি থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে পারেনি কেউ। বরং সময়ে সময়ে হয়ে ওঠেছেন আন্দলনের এক নায়ক।
মোহাম্মদ নাসিম আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের এক পরিচিত মুখ এবং রাজপথের লড়াকু সৈনিক। তার নেতৃত্বে অসংখ্য মিছিল-মিটিং হয় আন্দোলন সংগঠিত করতে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় যখন আওয়ামী লীগ তিনি তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর ২০০১ যখন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় তখন আবার আন্দোলনের মাঠে ফেরেন নাসিম।

সম্পর্কিত খবর

বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠন করলে হরতালের ডাক দেয় তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। সেই আন্দোলন রাজপথে তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে লাঠিপেটার মুখোমুখি হন তিনি। পুলিশের রাবার বুলেট আর লাঠিচার্জে রাজপথে লুটিয়ে পরেন নাসিম আর অগ্নিকন্যা খ্যাত মতিয়া চৌধুরী। জাতীয় দৈনিকে বড় করে ছবি ছাপা হয়। রাজপথে নাসিমের লুটিয়ে পড়ার সে দৃশ্যই পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের শক্তি জুগিয়েছে তৃণমূলে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে সেই সময়।
মোহাম্মদ নাসিম জুনের শুরুতে জ্বর সর্দি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত ছিল সে ছবি। ছবির ক্যপশনে একটাই কথা- ‘ফিরে আসুন আন্দোলনের নেতা’। আর মৃত্যুর সংবাদ শুনার পরও যেন পুরো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দখল নিয়েছে ছবিটি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম আকন্দ ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের রাজপথে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, আবার শেখ হাসিনার পাশে থেকে সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন ১৪ দলের সমন্বয়ক সাংসদ মোহাম্মদ নাসিম। পরপারে ভালো থাকবেন। ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন )।’
নাসিমের মৃত্যুতে বেদনার সঙ্গে সেই ঘটনা স্মরণ করছেন মতিয়া চৌধুরী, যিনি নাসিমের সঙ্গে বারবার মন্ত্রিসভায় থাকার পর দলের সভাপতিমণ্ডলীতেও একসঙ্গে রয়েছেন।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরের বিয়োগান্তক ঘটনায় নাসিম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। সে পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করে রাজনীতিতে তার বাবার ধারা এবং দেশের জন্য কাজ করা, সেটা সে প্রমাণ করেছে। সে ছিল অবিচল, বিশ্বস্ত এবং দেশের জন্য কাজ করে গেছে। গণমানুষের জন্য কাজ করে গেছে।’
মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, ‘দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে জেল-জুলুম, নির্যাতন হাসিমুখে বরণ করে গেছে। অনেকেই ঝামেলাহীন জীবনযাপন করেছে, কিন্তু নাসিম সেটা করেনি। নাসিম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ১৪ দল… আমরা ১৪ দলের সঙ্গে আছি, কিন্তু ১৪ দলের সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সব সময় জড়িত থেকে সবাইকে এক জায়গায় এনে কাজ করানোটা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করেছে। কারণ, এখানে নানা মত নানা পথের লোকজন আছে, যদিও সবাই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, কিন্তু আলাদা পার্টির। সুতরাং সবাইকে এক জায়গায় করার ক্ষেত্রে নাসিমের অবদান ছিল অসীম, যা সে করে গেছে সফলতার সঙ্গে। আজকে তার অকালমৃত্যু হলো। আমি অকালমৃত্যুই বলব, কারণ আমাদের সামনে নাসিমরা যখন চলে যায়, এটাকে আমরা অকালমৃত্যুই বলব। দেশের নিঃস্বার্থ একনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা এবং মাঠের কর্মী ছিল সে, তাকে হারালাম। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন, শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হ'ত্যা করা হয়। এরপর ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হ'ত্যা করা হয়। নাসিম ছিলেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ছেলে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস

Check Also

এরদোগানবিরোধী প্রচারণায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইকোনোমিস্ট

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ১০ দিন আগে প্রকাশিত ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনোমিস্ট কভার পেজসহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *