‘লিভিং ইগলস’ সাইফুলের মৃত্যুতে ফিলিস্তিনে শোক

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

পাইলট হিসেবে অসামান্য অবদানের জন্য মার্কিন বিমানবাহিনী কর্তৃক ঘোষিত বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ইগলস’ এর একজন সাইফুল আজমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছে ফিলিস্তিন। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে তিনি ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পক্ষে জর্ডানি ও ইরাকি বিমানবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন।
ফিলিস্তিনের হয়ে যুদ্ধের সময় তৎকালীন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল মাত্র দুটি আকাশযুদ্ধে চারটি ইসরায়েলি জঙ্গিবিমান ধ্বংস করেন। আজ পর্যন্ত এককভাবে সর্বাধিক ইসরায়েলি বিমান ধ্বংসের রেকর্ড তার। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়া বিদেশি এই যোদ্ধার মৃত্যুতে তাই ফিলিস্তিনিদের শোক।

ফিলিস্তিনের ইতিহাসবিদ ওসামা আল-আশকার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সাইফুল আজমকে একজন বীর আকাশযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করে তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের আমাদের ভাইয়েরা আল-আকসা মসজিদকে প্রতিরোধ ও রক্ষায় আমাদের এই লড়াইয়ের অংশীদার ছিল।’
ফিলিস্তিনের অধ্যাপক নাজি শৌকরি তাদের হয়ে লড়াইয়ে অংশ নেওয়া এই যোদ্ধার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘সাইফুল আজম ফিলিস্তিনকে ভালোবাসতেন এবং জেরুজালেমের স্বার্থে লড়াই করেছিলেন।’ শৌকরি সাইফুলকে সালাম জানিয়ে আল্লাহর কাছে তার জন্য অনুগ্রহ কামনা করেছেন।

সাইফুল আজমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই বাংলাদেশিকে ‘ঈগল অব দ্য এয়ার’ হিসেবে অভিহিত করে যুদ্ধক্ষেত্রে তার অনন্য অর্জনের কথা তুলে ধরেছেন। ফিলিস্তিনের আরও অনেকেই যোদ্ধা সাইফুলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
মার্কিন লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের ১৯৮৮ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘৮ হাজার বাংলাদেশি ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) হয়ে যুদ্ধ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হয়েছিল’। ১৯৮১ ও ১৯৮৭ সালে ইয়াসির আরাফাত ঢাকায় এসে বাংলাদেশিদের ফিলিস্তিনের সংগ্রামে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে অনন্য সব অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে সাইফুল আজমকে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনী বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ইগলস’ এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় । জর্ডান, ইরাক তাকে সম্মাননা দিলেও মার্কিন বিমানবাহিনীর দেওয়া এই উপাধিকে সর্বোচ্চ উপাধি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
লড়াকু এই আকাশ যোদ্ধা গতকাল রোববার দুপুর দেড়টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। সাইফুল আজমের জন্ম ১৯৪১ সালে পাবনা জেলায়।
বাবার কর্মসূতে তার শৈশব কেটেছে কলকাতা শহরে। দেশভাগের সময় তার পরিবার ফিরে আসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। এরপর ১৪ বছর বয়সে শিক্ষার উদ্দেশে তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো হয়। ১৯৬০ সালে পাইলট অফিসার হয়ে শিক্ষা সম্পন্ন করে ওই বছরই পাইলট হিসেবে যোগ দেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে।

১৯৭১ সালে সাইফুল আজম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের শুরুতেই তার ওপর পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে সাময়িকভাবে উড্ডয়নে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে আসেন সাইফুল আজম। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নেন।
১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ এবং ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দুবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। ১৯৯১-৯৬ সালে পাবনা-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাইফুল আজম।

Check Also

এরদোগানবিরোধী প্রচারণায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইকোনোমিস্ট

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ১০ দিন আগে প্রকাশিত ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনোমিস্ট কভার পেজসহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *