মাস্ক পরতে বলায় পিস্তল দেখিয়ে পুলিশ সদস্যকে পেটালেন যুবলীগ নেতা

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

রাজধানীর পল্লবীতে মাস্ক পরতে বলায় পিস্তল দেখিয়ে পুলিশের এক সার্জেন্টকে বেধরক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানার বিরুদ্ধে। গত রোববার দুপুরে পল্লবীর কালসী পুলিশ বক্সের অদূরে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী পুলিশ সার্জেন্ট মো. আল ফরহাদ মোল্লা আজ সোমবার পল্লবী থানায় জুয়েল রানাসহ অচেনা আরও ৪০ জনের বিরুদ্ধে হ'ত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর—৬১। তবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযুক্ত জুয়েলকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস কুণ্ড আজ সন্ধ্যায় দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘পুলিশ পেটানোর ঘটনায় জড়িত জুয়েল রানাসহ অচেনা আরও ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন হামলার শিকার পুলিশ সার্জেন্ট। অভিযুক্তরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

সার্জেন্ট আল ফরহাদ মোল্লা জানান, তিনি পল্লবী ট্রাফিক জোনে কর্মরত। রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে কালসী পুলিশ বক্সের অদূরেই মূল সড়কে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে বিকল হয়ে পড়ে বসুমতি পরিবহনের একটি বাস। রাস্তায় যানজট লেগে গেলে সহকর্মীদের নিয়ে বাসটি রাস্তা থেকে সড়ানোর চেষ্টা করছিলেন সার্জেন্ট ফরহাদ। এসময় বিকল হওয়া বাসের চালককে গালাগাল করছিলেন জুয়েল রানা। তাকে থামার জন্য বললে উল্টো ফরহাদকেও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন ওই যুবলীগ নেতা। এ সময় জুয়েলকে মাস্ক পরে কথা বলতে বললে আরও ক্ষেপে গিয়ে ফরহাদকে চরথাপ্পর মারতে থাকেন জুয়েল। একপর্যায়ে জুয়েল প্যান্টের পকেট থেকে পিস্তল বের করে ফরহাদকে গুলি করার জন্য উদ্যোত হন জুয়েল। সহকর্মী ও উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় রক্ষা পান।

সার্জেন্ট ফরহাদ আরও জানান, কালশী ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে জুয়েল রানা তার ক্যাডারদের খবর দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই অচেনা ৩০ থেকে ৪০জন এসে বক্সের মধ্যেই ফরহাদ ও তার সহকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। ছিনিয়ে নেয় তার বডিঅন সরকারী ক্যামেরা; ছিঁড়ে ফেলেন পরিধেয় পুলিশের পোষাক। খবর পয়ে পল্লবী থানা পুলিশ এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে সহকর্মীরা আহত ফরহাদকে ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আজ অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা জুয়েল রানার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ওপাশ থেকে সাড়া দেননি তিনি।

পল্লবীর স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, বছর দশেক আগেও পল্লবী-কালশী এলাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন রিকশাচালক পিতার সন্তান জুয়েল রানা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সংগঠনটির মিছিল সমাবেশে অংশ নিয়ে নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। নেতাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে নিজেই খুলে বসেন রিকশার গ্যারেজ। কিছু দিন পর বাগিয়ে নেন পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। এরপর বাউনিয়া বাঁধ, পলাশনগর, রূপনগর, বেগুনটিলা ও লালমাটিসহ আশপাশ এলাকায় সরকারি খাসজমি দখল করে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেন।

রিকশাচালক সেই জুয়েল রানা এখন রাজধানীর কালশী, কুর্মিটোলা ও বাউনিয়া বাঁধ এবং আশপাশ এলাকাবাসীর কাছে যেন মূর্তিমান আতঙ্ক! কালশী-বেগুনবাড়ী সংলগ্ন সরকারি জমিতে গড়ে তুলেছেন তিনি রাজু বস্তি। বিভিন্ন মামলায় কয়েক দফা জেলে যাওয়া জুয়েল নিজেও মামলায় ফাঁসিয়েছেন বহু মানুষকে। স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির ক্যাডার হিসেবে কাজ করেন জুয়েল। তাই তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।

২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে বাঁধের ডি ব্লকের বাউনিয়া বাঁধ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জামেনা আক্তারকে (১৪) ধ'র্ষণের অভিযোগে পল্লবী থানায় জুয়েল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে, অপমান ও দুঃখে ওই কিশোরী আত্মহ'ত্যা করলেও বিচার হয়নি জামেনার ধর্ষকদের।

Check Also

এরদোগানবিরোধী প্রচারণায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইকোনোমিস্ট

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ১০ দিন আগে প্রকাশিত ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনোমিস্ট কভার পেজসহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *