IPL ের সকল খেলা লাইভ দেখু'ন এই লিংকে rtnbd.net/live
আদায়কারী পদে চাকরি দেওয়ার নামে মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী জেলা পরিষদ সদস্য সাহানা ইসলাম শান্তনার বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই টাকা ফেরত পেতে গত বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) দুপুর থেকে গাংনী উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শহীদ মিনারে আমরণ অনশন শুরু করেন চাকরিপ্রত্যাশী মৌমিতা খাতুন পলি ও তার মা হোসনে আরা খাতুন। গাংনী থানার ওসি ওবায়দুর রহমান সাত দিনের মধ্যে টাকা আদায় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে শুক্রবার সন্ধ্যায় অনশন ভাঙেন পলি ও তার মা। পলি গাংনী পৌর শহরের শিশিরপাড়ার বাসিন্দা বাহাদুর আলীর মেয়ে।
চাকরিপ্রত্যাশী মৌমিতা খাতুন পলির অভিযোগ, গাংনী পৌরসভায় সহকারী কর আদায়কারী পদে নিয়োগের জন্য পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তখন জমি বন্ধক রেখে তারা পৌর মেয়রের পরামর্শে তার স্ত্রীর ইসলামী ব্যাংক মেহেরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ৫ লাখ ৭০ হাজার, ২৫ জানুয়ারি ৫০ হাজার এবং ৫ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ৯০ হাজার টাকাসহ মোট ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা দেন। একই বছরের জুলাই ও মে মাসে বাকি ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা পৌর মেয়রের হাতে নগদে দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৯ মে সহকারী কর আদায়কারী পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অথচ পলিকে ওই পদে নিয়োগ না দিয়ে মেহেরপুর শহরের মর্জিনা খাতুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে মেয়রকে বারবার তাগাদা দিলে মেয়র ১০ হাজার টাকা বেতনে পলিকে মাস্টাররোলে নিয়োগ দেন। পরে তার চাকরি স্থায়ী করে দেওয়ার আশ্বাস দেন মেয়র। কিন্তু মাস্টাররোলে দেড় বছর চাকরি করলেও তাকে অনিয়মিতভাবে খন্ড খন্ড করে বেতনের কয়েক মাসের টাকা দিলে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন এবং ঘুষের ১৫ লাখ টাকা ফেরত দিতে মেয়রকে চাপ দেওয়া শুরু করেন।
মৌমিতা পলির অভিযোগ, টাকার দাবিতে দিনের পর দিন মেয়রের বাড়ি ও অফিসে গিয়ে ধরনা দিলে মেয়র যুবলীগের ক্যাডারদের দিয়ে তাকে হ’ত্যার হুমকি দেন। একপর্যায়ে মেয়র বলেন, ‘কোর্টে মামলা করে পারলে টাকা নিবি। নাহলে টাকা দিতে পারবো না।’
পলি বলছেন, পাওনা টাকার জন্য কুমিল্লা থেকে স্বামী সংসার ফেলে গাংনী আসা যাওয়া করায় এবং ওই টাকার মধ্যে স্বামীর দেওয়া টাকা ফেরত দিতে না পারায় চাকরি পাশাপাশি তিনি এখন স্বামী-সংসার হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে অনশনের পথ বেছে নিয়েছেন। অনশনকালে পলি টাকা দেওয়ার প্রমাণপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্থানীয় সংবাদকর্মীদেরসহ উৎসুক মানুষকে দেখান।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, মৌমিতা খাতুন পলির স্বামী জমি কেনার জন্য কিছু টাকা দিয়েছিল। সেই জমিতে তারা এখন চাষাবাদ করছে। জমি ফেরত দিলে তিনি টাকা ফেরত দেবেন। তবে কত টাকা সেই উত্তর দেননি মেয়র।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র আরো বলেন, ‘ওদের জমিজমা সব শেষ। আমাকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ ওরা দেবে কোথা থেকে।’
অন্যদিকে অভিযোগের ব্যাপারে মেয়রের স্ত্রী জেলা পরিষদ সদস্য সাহানা ইসলাম শান্তনা বলেন, ‘এটা চাকরি দেওয়ার নামে কোনো টাকার লেনদেন না। এটা জমিজমা সংক্রান্ত টাকা।’
তবে মেয়র পত্নীর দাবি অস্বীকার করে মৌমিতা খাতুন পলির মা হোসনে আরা খাতুন বলেন, ‘এখন টাকা আত্মসাৎ করে হজম করতে মেয়র মিথ্যা কাহিনী তৈরি করছে। অথচ একমাত্র মেয়ের চাকরির জন্য ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে মেয়রকে দিতে গিয়ে ঘরের সবকিছু খুইয়েছি। এই শোকে স্বামী বাহাদুর আলী আজ পাগলপ্রায়। এখন মেয়র চাকরি অথবা টাকা না দিলে মৃত্যুই আমাদের একমাত্র পথ হবে এবং সেই মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে গাংনী পৌর মেয়র ও তার স্ত্রী।’
গাংনী থানার ওসি মো. ওবাইদুর রহমান বলেন, ‘পলি লিখিত অভিযোগ দিয়ে আইনি সহায়তা চাইলে দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তারপরও দুইপক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস