ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আমি এখন কী করবো, কিভাবে চলবো: সাদেক বাচ্চুর স্ত্রী

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন সদ্যপ্রয়াত অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। দুই ময়ে এক ছেলেকে নিয়ে এখন সাদেক বাচ্চুর স্ত্রী শাহনাজ যেন মাঝদরিয়ায় পড়লেন। সাদেক বাচ্চুর মৃত্যুর একদিনই পরই চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। কিভাবে যাবে আগামী দিন? স্বামী হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই ভাবতে হচ্ছে তাকে।
সাদেক বাচ্চুর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে মেহজাবীন এবার এইচএসসি প্রথম বর্ষে; আরেক মেয়ে নওশিন দশম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছেলে সোয়ালেহিন সবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে ।

মঙ্গলবার শাহনাজ বলেন, ‘তাকে (সাদেক বাচ্চু) হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। আমরা সুখি পরিবার ছিলাম। কোন অভাব অনটন ছিলো না। তিনি যা আয় করতেন তা দিয়েই এতোদিন মাতা উঁচু করে বেঁচেছি সবাই। আমার ছোট ছোট বাচ্চা, সব উনি সামলে রেখেছিলেন। হুট করে এভাবে চলে যাবেন, আমরা ভাবতেও পারছি না। কী করব না করব; কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।’
করোনায় আক্রা’ন্ত হয়ে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাদেক বাচ্চু।

স্বামীর মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি মুষড়ে পড়েছেন স্ত্রী শাহনাজ। সাদেক বাচ্চু নিজের ভাই-বোনদের মানুষ করতে গিয়ে মাত্র ১৫ বছর ৭ মাস বয়সে চাকরি নেন। বিয়ে করেন ৪০ বছর বয়স পেরিয়ে গেলে।
শাহনাজ জানান, ২০১৩ সালে সাদেক বাচ্চুকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় ইউনাইটেড হাসপাতলে খরচ হয়েছিল ৩০ লাখ টাকা, যা সাদেক বাচ্চুর অবসরের অর্থ দিয়ে পরিশোধ করা হয়। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা। তার পরেও ফেরানো যায়নি সাদেক বাচ্চুকে। তিন ছেলে-মেয়েকে রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।

‘ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আমি এখন কী করবো, কিভাবে চলব, কিছুই ভেবে পাচ্ছি না,’ -কঁদো কাঁদো কন্ঠে বলছিলেন শাহনাজ। তিনি বলেন, ‘ডাক বিভাগের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কিছু টাকা সঞ্চিত হয়েছিল। কিন্তু সাত বছর আগে ২০১৩ সালে ব্রেনস্ট্রোকে আক্রা’ন্ত হয়ে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন ৯ দিন। সে সময় ৩০ লাখ টাকা বিল দিয়ে তাকে সুস্থ করে নিয়ে এসেছিলাম। তখন পেনশনের সব টাকাই শেষ হয়ে যায়। সংসার চলছিল ওনার পেনশনের টাকায়। অভিনয়ের পারিশ্রমিক কিছুটা সহায়তা করেছে। এখন আমি বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব?’

শাহনাজ বলেন, ‘এদেরকে মানুষ করতে হবে, সংসার চালাতে হবে। যেখানে ওনার চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল, সেখানে সামনের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভেবে ভয় পাচ্ছি। ভিন্ন কোনো আয়ের উপায় নেই। উনি খুবই আত্মসম্মান নিয়ে চলতেন। পারলে সহযোগিতা করতেন। কখনো অর্থনৈতিক সহায়তা আমাদের প্রয়োজন হয়নি। সর্বশেষ ওনার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধারদেনা হয়েছে, আমার ভাই পাশে দাঁড়িয়েছে, সহযোগিতা করেছে।’

শাহনাজ বলেন, ‘আমার শ্বশুর শাশুড়ি বেঁচে নেই, আমার বাবাও মারা গেছেন। বয়স হয়েছে আমার মায়ের। আমাদের একমাত্র থাকার জায়গা ছাড়া কোনো জায়গাই নেই। চলচ্চিত্র পরিবারের কাছে যে সহায়তার আশা করব, এখন তো বাংলাদেশে চলচ্চিত্র কমে গেছে। সংগঠনগুলোর কাছ থেকে এই সময়টায় সহায়তা আশা করতে পারি না।’
মাত্র একটা দিন হলো স্বামী মারা গেছে, এই সময়টাতেও মাথা ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে না বলে জানান শাহনাজের। সন্তানদের দিকেও তাকাতে পারছেন না। তার পরও মনে করেন, সর্বস্বান্ত পরিবারটার পাশে প্রধানমন্ত্রী দাঁড়াতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আসলে শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া তো আর কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে না এখন। শুনেছি উনি দুস্থ শিল্পীদের সহায়তা করেন। আমার স্বামীর সহায়তার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু এখন আমাদের পরিবারটা কি এভাবে ভেসে যাবে?’
পূর্বপশ্চিমবিডি/জেআর

Check Also

এরদোগানবিরোধী প্রচারণায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইকোনোমিস্ট

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ১০ দিন আগে প্রকাশিত ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনোমিস্ট কভার পেজসহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *