৩৫০০ কওটি টাকা পাচার করে কানাডায় পাড়ি, কে এই পিকে হালদার

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

নাম তার প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তিনি। জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় পৌনে তিন’শ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া তাঁর নিজের ও স্বজনদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে এক হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মূল্যায়ন, এটা মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারসহ ১৯ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

যে ১৯ জনের হিসাব জব্দ ও পাসপোর্ট আটকানোর আদেশ দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে পিকে হালদার ছাড়াও রয়েছেন এমএ হাসেম, জহিরুল আলম, বিষুদেব ব্যানার্জি, পাপিয়া ব্যানার্জি , মমতাজ বেগম, নওশেরুল ইসলাম, আনোয়ারুল কবির, প্রকৌশলী নুরুল কবির। দুদক বলছে, কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার। অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করা হলে কমিশন সেটা যাচাই-বাছাই শেষে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয়। প্রশান্ত কুমার হালদারের জন্ম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামে। বাবা প্রয়াত প্রণনেন্দু হালদার ও মা লীলাবতী হালদার। তাঁর মা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রশান্ত কুমার হালদার ও প্রিতিশ কুমার হালদার—দুই ভাই–ই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

পরে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসিতে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পরিচালক ছিলেন প্রশান্ত কুমার হালদার। ১০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০০৯ সালে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হয়ে যান। এরপর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন। জানা গেছে, দুই ভাই মিলে ভারতে হাল ট্রিপ টেকনোলজি নামে কোম্পানি খোলেন ২০১৮ সালে, যার অন্যতম পরিচালক প্রিতিশ কুমার হালদার।

কলকাতার মহাজাতি সদনে তাঁদের কার্যালয়। আর কানাডায় পিঅ্যান্ডএল হাল হোল্ডিং ইনক নামে কোম্পানি খোলা হয় ২০১৪ সালে, যার পরিচালক পি কে হালদার, প্রিতিশ কুমার হালদার ও তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কানাডার টরন্টোর ডিনক্রেস্ট সড়কের ১৬ নম্বর বাসাটি তাঁদের। গত সেপ্টেম্বরে দেশে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। এর পরপরই গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম ও অন্যান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় আয়পূর্বক বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসংক্রান্ত যেসব অভিযোগ আসে, এসব বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর পর প্রথম তালিকায়ই প্রশান্তের নাম ছিল।

দুদকের এজাহারে বলা হয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদারের নামে-বেনামে ১৮৭ কোটি ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৪৩০ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। আর অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৯৯ কোটি ৬১ লাখ দুই হাজার ৯২৫ টাকার। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকার। অনুসন্ধানের সময় পাওয়া তথ্য মতে, ২০১৮ সালে তাঁর বার্ষিক মূল বেতন ছিল ৪৮ লাখ টাকা। এই হিসাবে ১৯৯৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বৈধ আয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এটা বাদ দিলে তাঁর কাছে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ আছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, প্রশান্ত কুমার হালদারের নিজ নামে ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময় প্রায় এক হাজার ৬৩৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জমা করেছেন। বিশাল ওই টাকার মধ্যে নিজের পরিচালিত হিসাবেই ২৪০ কোটি টাকা জমা হয় এবং তাঁর মা লীলাবতীর নামে পরিচালিত হিসাবে ১৬০ কোটি টাকা জমা হয়। প্রশান্তের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন সময়ে এক হাজার ২৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা জমা হয় এবং বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া হয়। এছাড়া প্রশান্তের নামে ঢাকায় একাধিক বাড়ি, প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে। নামে ও বেনামে আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর। দুদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে প্রশান্ত কুমারের নামে এত বিপুল সম্পদ অর্জনের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। এসব সম্পদের বেশির ভাগই তিনি বিদেশে পাচার করেছেন।

Check Also

এরদোগানবিরোধী প্রচারণায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইকোনোমিস্ট

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ১০ দিন আগে প্রকাশিত ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনোমিস্ট কভার পেজসহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *