‘আমার মেয়ে বিষ খেতে পারে না’

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

‘লেবাননে আমার মেয়ে শিরিনা ও তার দুই সন্তানকে পরিকল্পিতভাবে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। তার স্বামী রাজুর ওরফে বেচুর পূর্ব পরিকল্পনায় এ হ'ত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।’ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দেবিদ্বারে একটি রেস্তোরায় সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন মৃত শিরিনের মা মোসা. মনোয়ারা বেগম।

লিখিত বক্তব্যে তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে শিরিনের ছোট ভাই মো. আক্তারুজ্জামান ও রাজুর প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী মো. আবু ইউসুফসহ ধামতী গ্রামের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ‘গত ১৬ আগস্ট লেবাননের বৈরুতে বাংলাদেশি অধ্যুষিত সাবরা বাজার এলাকার একটি বাসা থেকে শিরিন ও তাই দুই সন্তানকে বিষক্রিয়া অবস্থায় উদ্ধার করে প্রতিবেশীরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিরিনা ও তার পাঁচ বছরের শিশু সন্তান খাদিজা মারা যান। বিষক্রিয়া কম থাকায় অপর নাতি মাহমুদ বেঁচে যায়। মাহমুদ বর্তমানে লেবাননে এক প্রতিবেশীর আশ্রয়ে রয়েছে। নিহত শিরিনা দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেন আসু মিয়ার মেয়ে। গত ১২ বছর আগে মায়ের সঙ্গে লেবাননে যান তিনি। সেখানে রাজুর সঙ্গে শিরিনের পরিচয় ও বিয়ে হয়। অভিযুক্ত রাজু নোয়াখালী জেলা সেনাবাগ উপজেলার দক্ষিণ কাঁদরা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বীন মোহাম্মদ মৌলভীবাড়ীর আব্দুল খালেকের ছেলে। আজ বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় লেবানন দূতাবাসের সহযোগিতায় শিরিনের মরদেহ বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।’

এদিকে, আজ সকালে শিরিনার মা বাদি হয়ে কুমিল্লা আদালতে রাজু, তার বড় বোন খালেদা আক্তার রানু, ভাই রাজিব ও টিটুকে আসামি করে একটি হ'ত্যা মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে, প্রতারণার শিকার আবু ইউসুফ মুন্সী রাজুসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে পেনাল কোডের ৪০৬/৪২০/১০৯ ধারায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে শিরিনা লেবাননে ব্যবসা করতেন। তার দুটি দোকান ছিল। যা থেকে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় হতো। ব্যবসা দেখাশুনা করার জন্য নোয়াখালীর টিটু নামে এক লোক ঠিক করে দেন। ওই টিটু রাজুর বিশ্বস্ত লোক। রাজু যা নির্দেশ করতো টিটু তাই করতেন। রাজুর নির্দেশেই টিটু হ'ত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।’

মনোয়ারা বেগম আরও দাবি করেন, ‘রাজু বিভিন্ন মানুষকে লেবাননে কাজ দিবে বলে জাল ভিসা দিয়ে প্রায় ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ধামতী গ্রাম থেকেও প্রায় ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে আবু ইউসুফের পাঁচটি ভিসার জন্য ২৫ লাখ, ধামতী গ্রামের কাশেম হুজুরের কাছ থেকে ৩ লাখ, একই গ্রামের আবুল হোসেনের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। এই টাকার জন্য লোকজন আমাকে চাপ দিচ্ছে। আমি এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’

শিরিনের বিয়ের পর জানতে পারি তার স্বামী রাজু ওরফে বেচু ঢাকা পল্টনের রাজিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে বাংলাদেশের একটি নারী পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। আমরা তাকে কয়েকবার হাতে নাতেও ধরি। এসব কাজে বাধা দেয় আমার মেয়ে শিরিনা। বাধা দিলে তাকে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন ও মারধর করতো। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আমার মেয়ে হ'ত্যার বিচার দাবি করছি।’

শিরিনের ছোট ভাই আক্তরাজ্জামান বলেন, ‘আমার মা ও বোনের ১২ বছরের সব আয়-রোজগার আত্মসাৎ করেছে রাজু ও তার পরিবার। ঢাকায় শিরিনের নামে বাড়ি কেনার কথা বলে দুইবারে ৯০ লাখ টাকা নিয়েছে। বাড়ি সে ঠিকই কিনেছে কিন্তু শিরিনের নামে নয় তার বড় বোন খালেদা আক্তার রানুর নামে। রাজু লেবাননে বিভিন্ন অপকর্মে এবং নারী পাচারে জড়িয়ে পড়লে লেবানন সরকার তাকে রেড অ্যালার্ট দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয়। পাঠানোর পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ নেই। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি সে দেশে এসে আবার বিয়ে করে। কয়েকমাস পর মোবাইল ফোনে রাজুর সঙ্গে যোগযোগ করে বাড়ি কেনার টাকা, বিয়ে ও লেবানন থেকে যে ঋণ নিয়েছে তা ফেরত দিতে চাপ দিলে রাজু ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বোনকে হ'ত্যার হুমকি দেয়। এর কয়েকমাস পরই পরিকল্পিতভাবে টিটুর সহযোগিতায় শিরিনা ও তার মেয়েকে হ'ত্যা করে।’

ভুক্তভোগী দেবিদ্বারের আবু ইউসুফ মুন্সি বলেন, ‘রাজু ভিসা দিয়ে আমাকে লেবাননে নিয়ে যায়। এবং সেখানে আমাকে কাজ দেয়। এ বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে এর কয়েকদিন পর রাজু ও শিরিনা আমাকে আমার গ্রাম ভৈষরকোট থেকে আরও লোক জোগাড় করতে বলে, আমি সরল বিশ্বাসে ৫ জন জোগাড় করি এবং তাদের থেকে ২৫ লাখ টাকা ও পাসপোর্ট ফটোকপি রাজুকে দেই, রাজু জাল ভিসা আমাকে দেয়, আমার সন্দেহ হলে যে কোম্পানির নামে ভিসা দিয়েছে আমি সে কোম্পানিতে যোগাযোগ করি, তারা আমাকে বলে, রাজু নামে এমন কাউকে কোনো ভিসা তারা দেয়নি। পরবর্তীকালে আমি রাজুর কাছে আমার টাকা ফেরত চাই, সে টাকা না দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আমি লেবাননে তার বাসায় কয়েকবার গিয়েছি, সেখানে আরও পাওনাদারদের দেখেছি, তারা সবাই রাজুর প্রতারণার শিকার। আমি দেশে এসে কোর্টে তার নাম উল্লেখ করে আরও ৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেছি। আমরা প্রতারক রাজুর বিচার দাবি করছি।’

Check Also

এরদোগানবিরোধী প্রচারণায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইকোনোমিস্ট

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ১০ দিন আগে প্রকাশিত ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনোমিস্ট কভার পেজসহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *