ফের তীব্র ভূমিকম্পে কাঁপল তুরস্ক

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

ভূমিকম্পে প্রায় অর্ধ লক্ষ প্রানাহানের দগ্ধ ক্ষত না শুকাতেই আবারো বড় ভূমিকম্পে কাঁপল তুরস্ক। দেশ দুটির সীমান্তবর্তী এলাকায় ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত এনেছে বলে খবর আল-জাজিরার।

বিস্তারিত আসছে…

আরো পড়ুন

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ। ইন্ডিয়া এবং বার্মা টেকটোনিক প্লেটে যে শক্তি সঞ্চয় হয়েছে; তার ৬০ থেকে ৮০ ভাগ যে কোন ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে বের হয়ে এলেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে এই অঞ্চল।

২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেবার আতঙ্কেই মারা যান ছয়জন। গত ১৫ বছরে ছোট-বড় ভূমিকম্পে ১৪১ বার কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। ছোট ভূমিকম্পগুলো বড় ভূমিকম্পের আলামত। আবার বড় ভূমিকম্পের শত বছরের মধ্যে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হয়। সেদিক থেকেও কয়েক বছরের মধ্যে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেশি।

ইন্ডিয়া এবং বার্মা প্লেট এবং বাংলাদেশের ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানবে। রাজধানী ঢাকার আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ঢাকা মহানগরীর।

ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের দুই দিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। একটি উত্তরপূর্ব কোনে সিলেটের ডাউকি ফল্টে, আরেকটা পূর্বে চিটাগাং ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে।

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়া ইন্ডিয়া-বার্মা টেকটোনিক প্লেটে গেলো শত বছরেও বড় কোন ভূমিকম্প হয়নি। তাই এই প্লেটে জমেছে দীর্ঘদিনের সঞ্চিত শক্তি। এটি যে কোন মুহূর্ত আট থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে হাজির হবার শঙ্কা আছে।

আর এমন মাত্রার ভূমিকম্প হলে, সেই ধাক্কা সামলাতে পারবে না ঢাকা। ধ্বসে পড়বে কয়েক হাজার ভবন, মৃত্যু হবে কমপক্ষে দুই থেকে তিন লাখ মানুষের। এমনটাই মনে করছেন ভূমিকম্প বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ঢাকায় যদি সাত মাত্রার ভূমিকম্পও আঘাত হানে, আমরাদের যে প্রস্তুতি, ভবনের স্ট্রাকচার, ঘনবসতি তাতে অনেক বড় বিপর্যয় হতে পারে। আমাদের এত বছরে যত উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তা আবার ফিরিয়ে আনা অনেক সময়-সাপেক্ষ ব্যাপার হবে।

শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের আশঙ্কার কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক আখতার বলেন, ভূতাত্ত্বিক কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশে তিনটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগ স্থলে অবস্থিত৷ উত্তরে তিব্বত প্লেট, পূর্বে বার্মা সাব-প্লেট এবং পশ্চিমে ইন্ডিয়া প্লেট৷ এগুলোর বিস্তৃতি সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার৷ এই জোনে বড় বড় ভূমিকম্প হয়েছে। আবার শতবর্ষে বড় ভূমিকম্প ফিরে আসে।

ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ইন্ডিয়া-বার্মা প্লেটের ওপরেই সিলেট-চট্টগ্রাম বিভাগের অবস্থান। তাই এই মাত্রার ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে এই অঞ্চল। এরমধ্যে চট্টগ্রাম অংশকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন এই বিশেষজ্ঞ।

কিন্তু কেনো বড় ধরণের ভূমিকম্পের শঙ্কা? এই বিশেষজ্ঞ বলছেন দেশে গেলো কয়েক বছরে ৩ থেকে ৫ মাত্রার ছোট ছোট বেশ কটি ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু গেলো শত বছরেও বড় ধরণের কোন ভূমিকম্প হয়নি। সে কারণেই শঙ্কাটাও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে প্রায় ১০ লাখ ভবন আছে। নতুন ভবন ছাড়া আছে বহু পুরানো ভবন, বেশি যার অধিকাংশই ভূমিকম্প সহনীয় নয়। পাশাপাশি ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গাও নেই ঢাকা শহরে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা দরকার। ঢাকার অবকাঠামো যেমন দুর্বল তেমনি মানুষের জনসচেতনতা কম। সেজন্য যদি একটা বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি হবে।

বুয়েটের বিভিন্ন সময়ে করা জরিপে দেখা যায়, ঢাকায় ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে তিন লাখ ও সিলেটে এক লাখ বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ৭৫ শতাংশ হচ্ছে ছয়তলা বা তার চেয়েও উঁচু। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই ভবনগুলো ও এর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷

বুয়েট ও সরকারের একটি যৌথ সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। যেখানে তৈরি হবে সাত কোটি টন কনক্রিটের স্তূপ। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কতটা প্রস্তুত, এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিশেষজ্ঞ সচেতনতার কথা জানান।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, গত দু’তিন বছরে দেশে ভূমিকম্প অনেক বেড়েছে। আবার ১০০ বছরের মধ্য এখানে তেমন বড় ভূমিকম্প হয়নি। এটা আতঙ্কের বিষয়। তার মানে, ছোট এসব কম্পন শক্তি সঞ্চয় করছে। ফলে, সামনে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা আছে।

তিনি বলেন, তুরস্কে যে ভূমিকম্প হয়েছে, এর চেয়ে ছোট, অর্থাৎ, রিখটার স্কেলে সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলেও শুধু ভবন ধস নয়, ঢাকার অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও গ্যাসলাইন এ নগরকে একটি অগ্নিকূপে পরিণত করতে পারে। কয়েক হাজার ভবন ধ্বসে পড়বে। মৃত্যু হতে পারে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষে।

তাই ক্ষতি এড়াতে ভূমিকম্প সহনীয় অবকাঠামো নির্মাণের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ভূমিকম্পের ক্ষয় ক্ষতি কমাতে হলে ঘনবসতি কমিয়ে শহরকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারের খাস জায়গাগুলোকে খালি করে প্রস্তুত রাখা দরকার বলে মনে করেন তারা।

Check Also

এরদোগানবিরোধী প্রচারণায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইকোনোমিস্ট

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ১০ দিন আগে প্রকাশিত ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনোমিস্ট কভার পেজসহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *