কোটি কোটি টাকা লোপাট করে স্ত্রী সহ গ্রেপ্তার সংসদ সদস্য ওমর ফারুকের ভাতিজা

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

সরকারি চাকরি নিয়ে দেওয়ার কথা বলে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর একটি মার্কেটের কর্মচারী ও তাঁর ভাতিজা মো. নাহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে মামলা হয়েছে। রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানায় প্রতারণার মামলা করেছেন ভুক্তভোগী যুবক মো. জনি আহম্মেদ। মামলায় মো. নাহিদুজ্জামানের স্ত্রীকেও আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কেটটির কর্মচারী ও সংসদ সদস্যের ভাতিজা মো. নাহিদুজ্জামান ওরফে পাপ্পু (৩০) ও তাঁর স্ত্রী বাঁধন জামানকে (২৮) আটক করে পুলিশ। পরে ওই মামলায় স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

পুলিশের হাতে আটকের সময় বাঁধন জামান সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্দেশেই তাঁর স্বামী এই লেনদেন করেছেন। বর্তমানে তাঁর স্বামীর কাছে কোনো টাকা নেই। তবে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে তাঁকে জড়িয়ে মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁদের (নাহিদুজ্জামান ও বাঁধন) বিরুদ্ধে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

গ্রেপ্তার মো. নাহিদুজ্জামানের বাড়ি রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার দড়িখরবোনা এলাকায়। তিনি সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর আপন মামাতো ভাইয়ের ছেলে। মামলার বাদী জনি আহম্মেদের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাত্রাপুর গ্রামে।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মো. জনি আহম্মেদের সঙ্গে আসামি নাহিদুজ্জামানের পরিচয় হয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুকের মালিকানাধীন মার্কেট থিম ওমর প্লাজায়। সেখানে নাহিদুজ্জামান নিজেকে থিম ওমর প্লাজার কর্মকর্তা এবং সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাতিজা বলে পরিচয় দিয়ে জনি আহম্মেদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। জনিকে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখান নাহিদুজ্জামান। এ জন্য তাঁরা একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তিপত্র তৈরি করেন। চুক্তি অনুযায়ী, জনির কাছ থেকে নাহিদুজ্জামান গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বোয়ালিয়া থানার ষষ্ঠীতলা এলাকায় অবস্থিত থিম ওমর প্লাজায় দুই লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এরপর বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে তাঁর কাছ থেকে আরও আট লাখ টাকা নেন। পরবর্তী সময় কনস্টেবল পদে জনির চাকরি না হলে তিনি নাহিদুজ্জামানের কাছে টাকা ফেরত চান। নাহিদুজ্জামান টাকা দিতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। জনি ওই প্লাজায় গিয়ে টাকার জন্য চাপ দিলে নাহিদুজ্জামান তাঁকে একটি চেক দেন। জনি চেক নিয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন, সেই ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা নেই। এরপর জনি আবার যোগাযোগ করলে নাহিদুজ্জামান তাঁকে গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বোয়ালিয়া থানার সপুরা ম্যাচ ফ্যাক্টরি মোড়ে টাকা নেওয়ার জন্য আসতে বলেন। জনি সেখানে গিয়ে নাহিদুজ্জামানকে মুঠোফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পান। তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পান, তাঁর মতো প্রতারণার শিকার অনেক ব্যক্তি টাকার জন্য অপেক্ষা করছেন। তখন জনি অন্য ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে সবাই মিলে সপুরা ম্যাচ ফ্যাক্টরির মোড়ে আসামি নাহিদুজ্জামানের ভাড়াবাড়িতে যান। এরই মধ্যে নগরের বোয়ালিয়া থানার পুলিশ ৯৯৯-এ কল পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সেখানে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের বিষয় জানতে পেরে আসামি নাহিদুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী বাঁধনকে পুলিশ আটক করে।

এ ঘটনায় গতকাল রাতেই জনি আহম্মেদ বাদী হয়ে থানায় তাঁদের নামে মামলা করেন। অন্য ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা মামলার সাক্ষী হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, আসামি নাহিদুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী বিভিন্নজনকে চাকরি দেওয়া, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সহজ–সরল ব্যক্তিদের চাকরির প্রলোভন দিয়ে প্রতারণা করে আসছেন।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল দিবাগত রাতে নাহিদুজ্জামানের প্রতারণার শিকার এক যুবক এসেছিলেন বাগমারা থেকে। তাঁর নাম মিলন রহমান। সহকারী ট্রেনচালক পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নাহিদুজ্জামান তাঁর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন। জমি বিক্রি করে ও ঋণ করে তিনি ওই টাকা দিয়েছেন। প্রমাণ হিসেবে নাহিদুজ্জামান ১০০ টাকা মূল্যমানের দুটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই করে দিয়েছেন। নাহিদুজ্জামানের কথামতো গত ৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম রেল ভবনে যোগদান করতে গিয়ে বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। একইভাবে নগরের শালবাগান এলাকার যুবক ইমনের কাছ থেকে নাহিদুজ্জামান সাড়ে ১১ লাখ টাকা নিয়েছেন। প্রমাণ হিসেবে দুটি ফাঁকা চেকে নাহিদুজ্জামান সই দিয়েছেন। ট্রেনের গার্ড পদে চাকরির জন্য তিনি এই টাকা নিয়েছেন। খবর পেয়ে রাতে বোয়ালিয়া থানায় আরও অনেকে আসেন। মামলায় আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ ৮৫ লাখ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আটকের সময় নাহিদুজ্জামানের স্ত্রী বাঁধন জামান বলেছিলেন, চাকরি দেওয়ার নামে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তাঁর স্বামীর মাধ্যমে টাকা নিয়েছেন। এ জন্য তাঁর স্বামীকে ওই টাকার ৩০ শতাংশ দেওয়ার কথা ছিল। বাকি ৭০ শতাংশ ওমর ফারুক চৌধুরীর নেওয়ার কথা। কিন্তু তাঁর স্বামীর হাতে কোনো টাকা নেই। সব নিয়েছেন সংসদ সদস্য। এ কথা ফাঁস করলে তাঁর স্বামীকে বাসায় গিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।

সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে ‘রাঘববোয়াল’ বলে সম্বোধন করে সাংবাদিকদের তাঁর কাছে যেতে বলেন বাঁধন। তিনি আরও বলেন, তাঁর স্বামীকে ধরে কোনো লাভ নেই। তাঁর স্বামীর হাতে কোনো টাকা নেই।

অভিযোগের বিষয়ে আজ দুপুরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ওমর ফারুক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীর (বাঁধন জামান) বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই নারীর বক্তব্যের সমর্থনে কী প্রমাণ আছে, এ বিষয়ে কোনো সাংবাদিকের নিউজ করা উচিত নয়। সংসদ সদস্য আরও বলেন, নাহিদুজ্জামানের বাবা তাঁর আপন মামাতো ভাই। তাঁর মা ও বাবার অনুরোধে নাহিদুজ্জামানকে তিনি মার্কেটের অ্যাডমিন অফিসার পদে চাকরি দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর (নাহিদুজ্জামানের) অপকর্মের বিষয় আন্দাজ করতে পেরে ২০ দিন আগে তাঁকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছেন। তাঁর স্ত্রীর বক্তব্যের একটি ভিডিও তিনি হাতে পেয়েছেন। যখন বুঝতে পেরেছেন যে তাঁদের পায়ের তলায় আর মাটি নেই। তখন পরিকল্পিতভাবে তাঁকে জড়িয়ে মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তিনি আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, মামলায় নাহিদুজ্জামান, তাঁর স্ত্রীসহ আরও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আজ দুপুরে তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Check Also

এরদোগানবিরোধী প্রচারণায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইকোনোমিস্ট

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ১০ দিন আগে প্রকাশিত ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনোমিস্ট কভার পেজসহ …

4 comments

  1. শেখ হাসিনার পাটনার

  2. M. P. ভাতিজার নাম এ প্রপার্টি রেখেছে খারাপ কি। সালারা দেশ টা ই গিলে ফেলছে।

  3. স্বৈরাচার সরকারের এমপি মন্ত্রীরা দুর্নীতিবাজ

  4. শক্তকরে আটকান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *