মানুষ না খেয়ে নেই, গায়ে জামাকাপড় আছে

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, গ্রাম-গঞ্জের কোনো মানুষ না খেয়ে নেই। প্রত্যেকটি মানুষ খেতে পারছে। প্রত্যেক মানুষের গায়ে জামাকাপড় আছে। গ্রামের প্রায় সব রাস্তাঘাট পাকা হয়ে গেছে। প্রাইমারি স্কুল করা হয়েছে। ঘর না থাকলে ঘর করে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ভিক্ষুক, মিসকিনের জাতি হিসেবে খ্যাত ছিলাম। এখন আমরা উন্নত দেশের নাগরিক। প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। সরকার বিভিন্নভাবে মানুষকে সক্ষম করে তুলছে।

বড় প্রজেক্ট হচ্ছে মানে আমাদের আয় হচ্ছে, জিডিপি বাড়বে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম বাংলাদেশ (ইউডিজেএফবি) আয়োজিত নগর সংলাপে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এখনো চলমান। যুদ্ধের কারণে এসব দেশ তেল সরবরাহ করতে না পারায় সারাবিশ্বেই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশও এর বাহিরে নয়। এই যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বেই এখন টালমাটাল অবস্থা।

অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সবকিছু নিয়েই মানুষ আতঙ্কিত। এখন আবার তাইওয়ান-চায়না উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সেটির প্রভাব কিন্তু সারাবিশ্বে পড়বে। পৃথিবীতে কি হতে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ বাণী করা কঠিন। মন্ত্রী বলেন, ইউরোপের অধিকাংশ দেশসহ সারাবিশ্বের প্রায় ২৫ ভাগ জ্বালানি আসে রাশিয়া থেকে। এখন সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বের সবথেকে বেশি জ্বালানি সরবরাহ আসে ভেনেজুয়েলা থেকে। কিন্তু ভেনেজুয়েলার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে তেল আনা সম্ভব নয়। আর তেল রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সৌদি আরব থেকে আমরা তেল সংগ্রহ করছি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপও তাদের ওপর নির্ভর হচ্ছে। সে কারণে একটা চাপ আমাদের উপরেও পড়ছে। তিনি বলেন, বহু টাকা গেছে বিদেশে এবং তা ফিরিয়েও আনা হয়েছে। আইএমএফ থেকে আমরা মাঝে মাঝে ঋণ নেই এবং তা শোধ করে দেই। কোভিডের সময়ও নিয়েছি। এটা স্বাভাবিক বিষয়। আমার মনে হয় না দেশে কোনো সংকট আছে। কিছু কিছু যেগুলো আছে, সেগুলো আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করতে পারবো। মন্ত্রী বলেন, সবক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া যায় না। ভর্তুকি দিয়ে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। সরকার কাকে ভর্তুকি দিবে? ধনীকে না গরিবকে? সবখানে ভর্তুকি দিলে অন্য খাতগুলো শৃঙ্খলা হারাবে।

ভর্তুকি কোথায় দিতে হবে সরকার সেটি অ্যানালাইসিস করে তারপর দেয়। তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা আমদানি করছি বেশি। বাংলাদেশ প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের আমদানি করে। এতে একদিকে আমাদের ওপর চাপ আসছে, আরেক দিকে দেখে খুশিও লাগছে যে বাংলাদেশ মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি করে। একসময় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার। আমরা তো এখন এটা হ্যান্ডেল করতে (সামাল দিতে) পারছি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, করোনা মহাসংকটের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সাময়িক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও সবার অংশগ্রহণে স্বাধীনতা লাভ করেছি। ঠিক এমনিভাবে সবাই একসঙ্গে কাজ করলে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, অনেক উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করছে। আমাদের দেশের অবস্থা এত খারাপ হলে তারা তো আমাদের সহযোগিতা করতো না। একটি গ্রুপ বলে বাংলাদেশ নাকি শ্রীলঙ্কা হবে। কেন হবে? শ্রীলঙ্কা কি করেছে আর আমরা কি করছি? ভয়ের কোনো কারণ নেই।

আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন। নগর সংলাপে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যে হারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে তাতে জনজীবনে সংকট ঘনীভূত হবে। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনায় বিদ্যুতের খুঁটি বেশি করার আকাঙ্ক্ষা ছিল বলে লোডশেডিং হতো বেশি। তখন আমরা যেখানে ছিলাম, এখনো যেন আমরা সেখানেই চলে এসেছি। মনে হচ্ছে সার্কেলটা যেন পূর্ণ হচ্ছে। ২০০৬ সালের মতো এখনো লোডশেডিং হচ্ছে। তিনি বলেন, রেন্টাল আর কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলোতে ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে, অথচ সেখান থেকে কোনো বিদ্যুৎ সেভাবে পাওয়া যায় না। সরকারের উচিত বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন। কোথায় গিয়ে থামতে হবে, সরকার সে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেনি। সরকারকে বিভিন্ন কার্যক্রমে সঠিক পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়নি। ফলে আমাদের ওপর ভর্তুকির বৃহৎ দৈত্য ভর করেছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি না করে হয়তো উপায় ছিল না, তবে এতটা মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। আমাদের দেশে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো অক্টোবর মাস। এই সময়ে যদি আমাদের মূল্যস্ফীতি যদি ডাবল ডিজিটে চলে যায়, তবে সেটা আমাদের জন্য ভালো হবে না। মূল্য কমানো হবে বলে আমাদের শুধু আশার মধ্যে না রেখে এটি কার্যকর করতে হবে। এ সময় ইউডিজেএফবি’র সভাপতি অমিতোষ পালের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সোহেল মামুনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রিয়াজুল হক, পদ্মা অয়েল কোম্পানির পরিচালক সাজাদুর রহমান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অরুণ কর্মকার প্রমুখ।

Check Also

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আত্মার: ভারতীয় হাইকমিশনার

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আত্মার বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *