‘ব্যাংকগুলো থেকে যত টাকা লুট হয়েছে, ব্রিটিশরাও এত লুটে নেয়নি’

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

দেশের বিদ্যমান ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। একটা গোষ্ঠী ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলো গিলে খাচ্ছে। করোনাভাইরাস বা ইউরোপে যুদ্ধের কারণে ব্যাংক খাতে এ সংকট দেখা দিয়েছে, এমনটি নয়। এ খাতের দুর্বলতা দীর্ঘদিনের। মূলত ব্যাংকগুলোতে লুটপাট চলছে। ব্রিটিশরাও এত টাকা লুটপাট করেনি, যত টাকা বর্তমানে ব্যাংকগুলো থেকে লুট হয়েছে।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) ‘সংকটে অর্থনীতি: কর্মপরিকল্পনা কী হতে পারে?’ শীর্ষক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতের দুর্বলতা মহামারি করোনাভাইরাস কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে নয়। এ খাত দীর্ঘদিন ধরে দুর্বলতার মুখোমুখি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। মূলত দুর্বল সুশাসন ও সংস্কারের অভাবে এ খাত ক্রমান্বয়ে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এটার যদি উন্নতি না হয়, তাহলে ব্যাংকগুলোতে মূলধনের ঘাটতি রয়েই যাবে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। এ নাম্বার সবার মুখস্ত।’

ব্যাংকগুলো থেকে যত টাকা লুট হয়েছে, ব্রিটিশরাও এত লুটে নেয়নি

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাস্তবে যেটা দেখানো হয়, খেলাপি ঋণের পরিমাণ তার চেয়েও বেশি। এটা অর্থনীতিবিদরা ও আইএমএফ বলছে। এর ভেতরে যদি আরও বেশ কিছু আনা হয়, ঋণের পরিমাণটা বাড়বে। স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট, লোন যেগুলো রয়েছে, কোর্ট ইনজাকশনের মধ্যে এগুলো হিসাব দেওয়া হলে সেটা দ্বিগুণের বেশি হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক, আইন ও তথ্যগত দুর্বলতার কারণে ব্যাংক খাতে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে।’
এ সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সিভিল সোসাইটিতে ভয়ংকর মিসম্যাচ আছে। এটা সিরিয়াস সমস্যা। আপনারা অর্থনীতিতে কালো মেঘ দেখছেন, আমি দেখছি সিলভার রেখা। আমাদের ঘাটতি আছে স্বীকার করছি। কোভিডের মধ্যেও আমাদের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল। অনেক জায়গায় আমরা ইমপ্রুভ করার চেষ্টা করছি। এখন আর ১০ বছরে জনশুমারি হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জেনেশুনেই আমরা অর্থনীতি চালাচ্ছি।’

সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি নীতিহীন অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে। আমরা সংসদে ভুলগুলো উত্থাপন করলে, তা উত্থাপন পর্যন্তই থাকে। বর্তমানে যেভাবে ব্যাংকে লুট চলছে, বৃটিশরাও এভাবে এ দেশ লুট করেনি। চাটার দল আস্তে আস্তে ব্যাংক গিলে খাচ্ছে। ২৫ বিলিয়ন রিজার্ভ নিয়ে এত শঙ্কা কেন সরকারের। এছাড়া যে মেগা প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে তা থেকে মেগা ইনকাম আসছে না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ডিনার করে ফুর্তি করা না। প্রচুর মানুষ কীভাবে বিদেশে বাড়ি বানিয়েছে, তাদেরকে চিহ্নিত করুন। আমরা দেশে দক্ষ লোক না বানিয়ে অদক্ষ ভিখারি বানিয়ে ফেলেছি। আর এ অর্থনীতির সংকটে আমরা অর্থমন্ত্রীকে দেখতে পাচ্ছি না। তিনি পদ্মফুলের মতো বছরে একবার ফোটেন।’

আরও পড়ুন>> ব্যাংক খাতের সংকট কোভিড বা যুদ্ধের কারণে নয়: সিপিডি

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অর্থনীতির মূল সংকটের একটি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতা। তারা বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। অথচ ভারতের মতো রাষ্ট্রে চারবার মুদ্রানীতি ঘোষিত হয়। এটা তো বাজেট না যে, বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাতে মূলত স্বচ্ছতার অভাব। ডাটা পাওয়া কোনো ব্যাপারই না। কয়েকবছর আগে ব্যাংক খাত সংস্কার করা হলো। কিন্তু দেখা গেলো এটা উল্টোরথে গেলো। তাদের জিজ্ঞেস করেন কারেন্ট অ্যাকাউন্ট কীভাবে বাড়লো? তারা কোথায় এ বিনিয়োগ বাড়ালো?’

পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর বলেন, ‘ঝড়ের আগে পরিবেশ খুব ঠাণ্ডা থাকে। কিন্তু যখন প্রলয় এসে যায়, করার কিছুই থাকে না। দেশের অর্থনীতিরও একই অবস্থা। ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও ক্রমান্বয়ে কমছে। কিন্তু ভারতের মতো রাষ্ট্রে তা ১৯-২০ শতাংশ। তাদের ক্যাপাসিটি টু অ্যাবজর্ব আর আমাদের ক্যাপাসিটি টু অ্যাবজর্ব কি এক হলো?’

তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, জানুয়ারির মধ্যে ডলার সংকট কেটে যাবে। আমি বলি, আগামী ছয়মাসেও ডলার সংকট কাটবে না। আরও বেশি সময় লাগতে পারে। ব্যাংকে সংকট এত প্রকট যে, অল্প কয়েকদিনে পাঁচ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, এটা তো তলাবিহীন ঝুড়ির মতো। রিজার্ভের হিসাবে কোনো আন্তর্জাতিক নিয়ম নেই। রেগুলটরি সংস্থা কিছুই করবো- টাইপের ভাব নিয়ে বসে আছে। তবে সরকারকে ধন্যবাদ আইএমএফের সঙ্গে খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে।’

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির সংকটে মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি একসঙ্গে দেখলে হবে না। দুটোকে আলাদা করে দেখু'ন। দেশের আমদানি ব্যয় বেড়েছে দুটো কারণে। প্রথম কারণ হলো- আন্তর্জাতিক। আরেকটি অভ্যন্তরীণ বাজারের অনিয়ম।’

তিনি বলেন, ‘সাপ্লাই বাড়লে দেশের মূল্যস্ফীতি কমতে সাহায্য করবে। মিনিমাম ওয়েজ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির সমাধান সম্ভব না। আইএমএফের কাছ থেকে সঠিক পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত কি জানি না। পরামর্শগুলো সবাই জানি। কারণ তাদের পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হলে আইএমএফ অর্থ ছাড় করে না।’

সংলাপে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘সাবসিডি (ভর্তুকি) যদি দিতেই হয়, তাহলে পুঁজিবাজারে দেন। গ্রামীণফোনের মতো কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকার এমনভাবে সিদ্ধান্ত নিলো! ফলে তার দাম এত কমে গেছে যে, বিনিয়োগকারীদের মাথায় হাত। আর বিএসইসির ফ্লোর প্রাইস দিয়ে তো শেয়ারবাজার চালানো যায় না।’

Check Also

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আত্মার: ভারতীয় হাইকমিশনার

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আত্মার বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। …

7 comments

  1. ১০০%ঠিক

  2. রাইট

  3. সঠিক বলেছেন।

  4. বিদেশি লুটেরাদের চাইতে দেশি লুটেরারা অনেক বেশি ভয়ংকর।

  5. সুমনরা এগুলো নিয়ে রিট করবেনা

  6. Mufti Mofassir Hossain

    1000%সঠিক

  7. আপনারা যদি জেনে থাকেন কিছু করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *