‘নিষিদ্ধ’ ব্ল্যাক রাইস চাষ, এলাকায় হইচই

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা গ্রামে ‘নিষিদ্ধ’ ব্ল্যাক রাইস চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক আবদুর রহমান। এই ধান, চাল ও ভাত কালো রঙের। জনশ্রুতি আছে একসময় থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশের রাজা-বাদশারা ওই কালো ভাত খেতেন।

যা সাধারণ প্রজাদের চাষ করা ও খাওয়া নিষেধ থাকায় এর নাম হয় ‘নিষিদ্ধ’ ব্ল্যাক রাইস। আবদুর রহমান ওই ধান চাষের পর আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অন্য কৃষকরাও।

কৃষক আবদুর রহমান জানান, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাজমুস শাকিবের কাছ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে ওই কালো ধানের ২ কেজি বীজ সংগ্রহ করেন। নাজমুস শাকিব থাইল্যান্ড থেকে এই ধান নিয়ে এসেছিলেন। এরপর তিনি জুলাই মাসে বীজ বপন করে চারা উৎপাদন এবং আগস্টে ১২ কাঠা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেন। তার ক্ষেতে ফলনও ভালো হয়েছে। ১২ কাঠা জমি থেকে প্রায় ৭ মণ ধান পাবেন বলে আশা করছেন।

তিনি জানান, অন্য ধানের তুলনায় এই ধান চাষে বেশি লাভের আশা করছেন তিনি। কারণ অন্য ধানের তুলনায় ওই ধানের দাম অনেক বেশি। প্রতি কেজি ধান তিনি ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন।

আবদুর রহমান জানান, গত বছর ডুমুরিয়ায় একজন কৃষক ব্ল্যাক রাইস চাষ করেছিলেন। একজন কৃষি কর্মকর্তা ও বীজ বিক্রয়কারী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তিনি মূলত ব্ল্যাক রাইসের বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকজন কৃষক তার কাছ থেকে বীজ নেয়ার কথা বলে রেখেছেন।

এদিকে বাজারদর ভালো হওয়ায় ওই কালো ধান চাষ দেখে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এলাকার অন্য কৃষকরাও। বেশ কয়েকজন কৃষক আবদুর রহমানের ক্ষেতে কালো ধান দেখতে যান। স্থানীয় কৃষক মনিমোহন হালদার ও হাজরা বলেন, আমাদের জমির পাশে আবদুর রহমান নতুন জাতের ধান চাষ করেছে। আমরাও আগামীতে এই ধান চাষ করবো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় গতবছর প্রথম ডুমুরিয়া উপজেলার গোলনা গ্রামের কৃষক মো. ইমন খান ৩৩ শতক জমিতে কালো ধান চাষ করেন। এক বিঘা জমিতে অন্য ধান ১৫ মণ হয়, এই ধানও ১৫ মণ হয়। তবে অন্য ধানের তুলনায় এই ধানের দাম অনেক বেশি। এক বিঘা জমিতে এই ‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষে সব মিলে খরচ হয় প্রায় ৭ হাজার টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, এই ধান চাষে সার ও কীটনাশক কম লাগে এবং ধানক্ষেতে পোকার উপদ্রবও কম হয়। দেশি প্রজাতির মতোই চাষ করা যায়। চারা রোপণের ১১৫ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ক্ষেতের ধান কাটার উপযুক্ত হয়। অন্য ধানের জীবনকাল ১৫৮ বা ১৬০ দিন হলেও এই ধান ১১৫ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে কাটা যায়। দেশি ধানের তুলনায় এই ধান বেশি লম্বা। এই ধানের ভাতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই ধান চাষ সম্প্রসারণের জন্য তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, জনশ্রুতি রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ থাকায় এক সময় থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশের রাজা-বাদশারা এই চালের ভাত খেতেন। দেশগুলোর সাধারণ কৃষকদের এই ধান চাষ কিংবা এই চালের ভাত খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। সে কারণে এই ধান ‘ফরবিডেন ব্ল্যাক রাইস’ নামে পরিচিত।

তিনি বলেন, ডায়াবেটিসের অনেক রোগী তিন বেলা ভাত খেতে পারে না। কিন্তু এই চালের ভাত ডায়াবেটিস রোগীরা তিন বেলা খেলেও কোনো অসুবিধা হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, এই ব্ল্যাক রাইসে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই চালে প্রচুর পরিমাণে অ্যানথোসায়োনিন ও ফাইবার রয়েছে, যা যথাক্রমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং হজমে সহায়তা ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করে। এছাড়া এই চালে থাকা আয়রন ও প্রোটিন শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে।

Check Also

বিএনপি বাজারের বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট

রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানার পাশে বিএনপি বাজারের বস্তিতে আগুন লেগেছে। নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *