প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাত চাঁদার টাকায় স্বর্ণালঙ্কার-ফ্রিজ উপহার, না খেয়েই ফিরে এলেন অনেকে

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের একমাত্র ছেলে সাফায়েত বিন জাকির সৌরভের বৌভাতের অনুষ্ঠান হয়েছে রোববার (৮ জানুয়ারি)। কুড়িগ্রামের রৌমারিতে প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৌভাত অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক।

জেলার তিন উপজেলার ২৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে দাওয়াত খেতে যান শিক্ষকরা। শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্বজনসহ প্রায় ১০ হাজার লোক নিমন্ত্রিত ছিলেন। বৌভাত অনুষ্ঠানে যেতে উপহারস্বরূপ লক্ষাধিক টাকার ফ্রিজ, স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যান তারা। তবে অনেকেই না খেতে পেরে ফেরত এসেছেন। বসার আসন সংখ্যার চেয়ে লোকজনের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় এ রকম ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

দাওয়াতে অংশ নেওয়া লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানের জন্য নেতাকর্মী, শিক্ষক, স্বজনসহ প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম থাকলেও দাওয়াতের প্যান্ডেলে বসার আসন ছিল কম। এক বৈঠকে ৫০০ লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকের সংখ্যা ছিল ১০০০-১৫০০। এ অবস্থায় অনেকেরই খাওয়ার সুযোগ ছিল না। বৌভাতের এ অনুষ্ঠানের জন্য ১৫টি গরু, সাতটি খাসি ও মুরগির মাংসের ব্যবস্থা ছিল। তবে অনেকেই বৌভাত না খেতে পেরে হোটেলে ভাত-রুটি-চা খেয়ে ফেরত এসেছেন।

প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন জেলার তিন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। এই তিন উপজেলা হলো রৌমারী, চর রাজিবপুর ও চিলমারী। তিন উপজেলার মোট এক হাজার ৩০০ জন শিক্ষক ওই বৌভাতের জন্য আমন্ত্রিত ছিলেন। এজন্য তাদের বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হয়েছে জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা। সেই টাকায় নতুন বউ ও প্রতিমন্ত্রীর ছেলের জন্য সোনার আংটি, ফ্রিজ ও ওয়াশিং মেশিন গিফট দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জাগো নিউজকে বলেন, বৌভাত অনুষ্ঠানের চাঁদার টাকা প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি টাকা উঠেছে। তবে অনেকে ৩০০ টাকা চাঁদা দিয়েও এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন। চাঁদার টাকায় নবদম্পতির জন্য সোনার আংটি, ফ্রিজ ও ওয়াশিং মেশিন গিফট দেওয়া হয়।

রৌমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানের জন্য তার সংসদীয় এলাকার ২৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। এজন্য গতকাল (রোববার) বিদ্যালয় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তিন উপজেলার সব শিক্ষক বৌভাতের অনুষ্ঠানে আসেননি। যেমন রৌমারী উপজেলায় ৬৫০ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৩৫০ জনের মতো এসেছিলেন। রৌমারী উপজেলার শিক্ষকদের পক্ষ থেকে মন্ত্রীর ছেল ও ছেলের বউকে সোনার আংটি উপহার দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আর বলেন, আমরা কর্মদিবস ছাড়াও অনেক সময় ছুটির দিনে বিদ্যালয়ের কাজ করি। যেমন, এবছরের শীতকালীন ছুটি বাতিল করলো। আমাদের এখন তো বিদ্যালয়ের কাজ করতেই হবে। তাই প্রধান শিক্ষকদের হাতের সাধারণ ছুটি থেকে একদিন প্রতিমন্ত্রীর পুত্রের বৌভাতের দাওয়াতে যাওয়া অন্যায় নয় বলেও এই শিক্ষক দাবি করেন।

জানতে চাইলে চিলমারী উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়েছে, খালি হাতে কীভাবে যাই? তাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ২০ কেজি মিষ্টি নিয়ে গেছি।’

চাঁদার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের কাউকে চাঁদার জন্য চাপ দেওয়া হয়নি। যারা বৌভাত অনুষ্ঠানে যেতে আগ্রহী তারাই শুধু চাঁদা দিয়েছে এবং স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই দিয়েছেন।’

তবে ফ্রিজ ও ওয়াশিং মেশিন গিফটের কথা জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি এই শিক্ষক নেতা।

চিলমারী উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত লোকের অভাব ছিল না। তিন উপজেলার এক হাজারের বেশি শিক্ষক, তিন উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় চার হাজার নেতাকর্মী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন মিলে প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। দুপুরে একসঙ্গে অনেক লোকের সমাগম হয়। এসময় অনেকেই দাঁড়িয়ে খাবার গ্রহণ করেন আবার বসার জায়গা না পেয়ে কেউ কেউ বাজারে রুটি-কলা খেয়েই ফেরত এসেছেন।’

নয়ার চরের আরেক শিক্ষক বলেন, ‘দাওয়াতের জন্য চাঁদা দিয়েছি। কত দিয়েছি সেটা বলা যাবে না। মন্ত্রীর ছেলের বৌভাতে আয়োজন ব্যাপক ছিল কিন্তু সিস্টেম ব্রেক হয়েছে, খাওয়াতে পারে নাই। না খেয়েই ফেরত চলে এসেছি।’

রৌমারীর অষ্টমীরচর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমি ও পরিষদের লোকজন দাওয়াত খেতে গিয়ে না খেয়ে ফেরত এসেছি। কেননা দাওয়াতের প্যান্ডেলে বসার সিট সংখ্যার চেয়ে বেশি লোকজনের সমাগম ছিল। একজন খেতে বসলে চেয়ারের পেছনে তিনজন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এরকম বিশৃঙ্খলার কারণে না খেয়ে চলে এসেছি। হুড়োহুড়ি করে কি আর দাওয়াত খাওয়া সম্ভব!’

তিনি আরও বলেন, আমাদের মতো আরও অনেকে গিফট দিয়ে দাওয়াত না খেয়ে ফেরত এসেছেন।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে দফায় দফায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Check Also

বিএনপি বাজারের বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট

রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানার পাশে বিএনপি বাজারের বস্তিতে আগুন লেগেছে। নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার …

4 comments

  1. Durniti ar koto

  2. Durniti ar koto

  3. যেমন কুকুর তেমন মেঘোর

  4. যেমন কুকুর তেমন মেঘোর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *