মায়ের ডায়ালাইসিস করাতে এসে গ্রেপ্তার কলেজছাত্র মোস্তাকিম

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

কিডনির কার্যকারিতা কমে আসায় প্রতিমাসেই অন্তত ১২ বার ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয় নাসরিন আক্তারের। স্বামী না থাকায় কলেজ পড়ূয়া একমাত্র ছেলেকেই জোগাড় করতে হয় ডায়ালাইসিসের খরচ। পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাঁচটি টিউশনি করে ডায়ালাইসিসের টাকার সংস্থান করেন ছেলে মোস্তাকিম। ডায়ালাইসিস করাতে মাকে নিয়ে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আসেন তিনি। গেল মঙ্গলবার হাসপাতালে এলেও করানো যায়নি ডায়ালাইসিস। হাসপাতাল চত্বরে ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে হঠাৎ বিক্ষোভ শুরু হলে মাকে নিয়ে যোগ দেন তিনিও।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে তাঁর ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এক পর্যায়ে বিনা দোষে আটক করা হয় মোস্তাকিমকে। মামলার পর কারাগারে যেতে হয় তাঁকে। একমাত্র ছেলে কারাবন্দি থাকায় দুশ্চিন্তায় ভালো নেই মা। এর ওপর নির্ধারিত দিনে ডায়ালাইসিস করাতে না পারায় শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে তাঁর। তবে নিজের শরীরের চেয়ে কারাগারে থাকা ছেলের মুক্তি নিয়েই মায়ের বেশি ভাবনা। এই মারপ্যাঁচ থেকে বের হবেন কীভাবে হতভাগী মা নাসরিন আক্তার? এ প্রশ্নই এখন সবার।

মা-ছেলের সঙ্গে ঘটে যাওয়া হৃদয়স্পর্শী এ ঘটনা এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মায়ের চিকিৎসা করাতে এসে হামলার শিকারের পর আবার পুলিশের মামলা করার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ঝাড়ছেন ক্ষোভ। ঘটনাটি দাগ কেটেছে অনেকের মনে। এ অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়া কলেজছাত্র মোস্তাকিমকে বিনা পয়সায় আইনি সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন (বিএইচআইএফ)।

এদিকে ছেলের মুক্তি চেয়ে গতকাল আদালতের কাছে করজোড়ে আরজি করেছেন মা নাসরিন আক্তার। মানবিক দিক বিবেচনা করে আদালতের কাছে মোস্তাকিমকে খালাসের আবেদন করেন চট্টগ্রামের একদল আইনজীবীও। মায়ের শারীরিক অবস্থা যখন এমন; তখন পুলিশ উল্টো আদালতের কাছে মোস্তাকিমের রিমান্ড আবেদন করেছে। তবে আদালত সবদিক বিবেচনা করে রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। মামলার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান।

মোস্তাকিমের মা নাসরিন আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘মোস্তাকিমই আমার অন্ধের যষ্টি। ঘরে ১০ বছরের একটি মেয়ে থাকলেও সে প্রতিবন্ধী। আমার দুই কিডনিই বিকল। ছয় বছর ধরে নিয়মিত ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হচ্ছে। বেসরকারিভাবে ডায়ালাইসিস করানোর সক্ষমতা নেই, তাই চমেক হাসপাতালই একমাত্র ভরসা। ডায়ালাইসিস ফি, আসা-যাওয়ার খরচসহ সব মিলে প্রতিমাসে আমার ২০ হাজার টাকার মতো প্রয়োজন হয়। আর এই টাকা জোগাড় করতে হয় কলেজ পড়ূয়া ছেলেকেই। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে নিয়মিত ধার-দেনা করে এতদিন চিকিৎসা চালিয়ে আসছি। এ টাকা জোগাড় করতেই যেখানে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে বাড়তি ফি দিয়ে ডায়ালাইসিস করানো আমার পক্ষে অসম্ভ্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে ডায়ালাইসিস করাতে এসে ওকে যেতে হয়েছে কারাগারে।

আদালতের কাছে ছেলের জামিন চাইলেও পাইনি। যেসব পুলিশ সদস্য আমার ছেলেকে মেরেছে, তাঁরাই আবার তার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করেছে। এখন পুলিশই আবার আমার ছেলের রিমান্ড আবেদন করেছে। ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার দিন রাত পর্যন্ত পাঁচলাইশ থানার সামনে বসেছিলাম। ছেলের খোঁজখবর জানতে কখনও কনস্টেবল, কখনও ওসির কাছে ছুটেছি। পুলিশের হাতে-পায়েও ধরেছি। তারা আমার কোনো কথা শুনতে চায়নি।’
হাটহাজারীতে নিজেদের বাড়ি হলেও চট্টগ্রাম নগরের জালালাবাদ অক্সিজেন এলাকায় সন্তানদের নিয়ে বাস করেন নাসরিন আক্তার। প্রায় ছয় বছর আগে স্বামী খালেদ আজম মারা যান। ছেলে মোস্তাকিম পড়েন চট্টগ্রাম কলেজে।

গত মঙ্গলবার চমেক হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে আন্দোলন করার সময় মোস্তাকিমকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ওই দিনই তাঁর নামে মামলা ঠুকে দেয় পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মোস্তাকিমের কোনো দোষ ছিল না। ডায়ালাইসিস করাতে এসে বিক্ষোভ করা রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কর্মসূচিতে যোগ দেন মোস্তাকিম ও তাঁর অসুস্থ মা। এক পর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছবি তুলতে চাইলে তাতে বাধা দেন মোস্তাকিম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ সদস্যরা তাঁর ওপর চড়াও হন। মোস্তাকিমের কলার ধরে টানাহেঁচড়া করতে থাকে কয়েকজন পুলিশ। পরে মোস্তাকিমকে চড়থাপ্পড় মারতে থাকে তারা। এ সময় তাঁকে বাঁচাতে ছুটে আসেন তাঁর মাসহ অন্য রোগী ও স্বজনরা। ওই সময় তাঁদের ওপরও হামলা করতে তেড়ে যায় পুলিশ। এর মধ্যেই মোস্তাকিমকে কিল-ঘুষি মারতে মারতে সড়কের অন্য প্রান্তে নিয়ে যায় পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠক জিয়া হাবিব আহসান সমকালকে বলেন, ‘মা-ছেলের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি খুবই হৃদয়বিদারক। শতাধিক আইনজীবী মোস্তাকিমের জামিন আবেদনের শুনানির সময় উপস্থিত ছিলেন। সবার একটিই চাওয়া ছিল- তাঁর জামিন।’

জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করা নাগরিক অধিকার। সেখানে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিবাদকারীদের ওপর উল্টো পুলিশ হামলা চালাবে, ধরে নিয়ে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে মামলা করবে- এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম আহসান বলেন, ‘চলমান সংকট নিরসনে নিজেরাই নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। এর মধ্যে হাসপাতালে থাকা তিনটি ডায়ালাইসিস মেশিনে রোগীদের সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শিগগির আরও ১০টি মেশিন আমাদের দেবে বলে জানিয়েছে।’

Check Also

বিএনপি বাজারের বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট

রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানার পাশে বিএনপি বাজারের বস্তিতে আগুন লেগেছে। নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার …

22 comments

  1. তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি
    এবং মুক্তি দাবি করছি।

  2. Ata Bangladeshe e possible

  3. কোন দেশে আছি নিজেও কিছু বুঝতে পারছি না আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েত করুন আমিন ।

  4. ইন্নালিল্লাহ!!কি বিপদ আল্লাহরে!!!!

  5. পুলিশ প্রশাসন এত জঘন্য কাজ করতে পারে সেটা বুঝতে মানুষের বাকি থাকে ওদেরকে জনগণের বিপক্ষে তাড়ানোর সুযোগ করে যারা দিয়েছে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে

  6. আল্লাহ তুমি জামিনের বেবসতা করে দাও

  7. নিশ্চয়ই ৭১ এর মানবতা বিরোধী কাজে জড়িত ছিল 😭 ও পুলিশ লীগ গজব তরান্বিত হচ্ছে তোমাদেরই জন্য ইনশাআল্লাহ

  8. কমেন্ট লিখতেও ভয় হয় যদি আমাকে ,,,,,,

  9. সবার আগে পুলিশলীগকে সমাজিক ভাবে বয়কট করুন,
    এবং তাদের সাথে আত্মীয়তা সম্পর্ক করবেন না ।

  10. 😭😭😭😭😭😭😭😭Kicu blar nei tai emoji dilam

  11. তীব্র নিন্দা জানাই ওকে ছেড়ে দেন, ওর মনে যদি পুলিশ পুলিশ থাকতো, তাহলে মায়ের চিকিৎসা করতে আসতো না।

  12. Bolar Kono vasa nei, si

  13. যে যার মত করে পুলিশকে

  14. তীব্র নিন্দাও প্রতি বাদ জানাচ্ছি

  15. Polish.mother.sud

  16. অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি চাই।

  17. মানবিক কারনে মুক্তি দিন।মায়ের ডায়ালাইসিস, আবেগতাড়িত হয়েছে।
    তবে ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে কেও গ্রেপ্তার হয়না
    নিশ্চিত অপকর্ম করেছে

  18. লতিফ বিশ্বাস

    আল্লাহ ভরসা

  19. নিন্দা জানাই

  20. Ma aita hasina sorkar

  21. এই বাবে মানুষ এর জিবন চলতে পারেনা। এই দুনিয়া শান্তির জায়গা নয়।

  22. SultanaHasan Mafuja

    Asob kolangar poles der ma babara jano amon kosty poren .taholy bojby make rotno.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *