জাপানি মা,বাংলাদেশি বাবা: সন্তান নিয়ে ‘লড়াই’ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির পরামর্শ

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

দুই সন্তান নিয়ে জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবার মধ্যে আইনি লড়াই চলার মধ্যে আদালতে বাইরে সমঝোতার পরামর্শ দিয়েছেন একজন বিচারক।

ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি না করে বাবা ইমরান শরীফের আইনজীবী সময়ের আবেদন করেন বৃহস্পতিবার। এই শুনানির আগে শিশুদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তির পরামর্শ দেন ঢাকার জেলা জজ এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, “শিশুদের হেফাজতে নিয়ে আদেশ পাস করা একটি সংবেদনশীল বিষয়। একজন জাপানি নাগরিক বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত।

“২০১৬ সালের জুলাইয়ে হোলি আর্টিজান ক্যাফে হামলায় জাপানি প্রকৌশলীদের মৃত্যুতে আমাদের বড় ক্ষতি হয়েছে। এখন আমি এমন কোনো আদেশ দিতে চাই না, যা আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।”

দুই শিশু কার কাছে থাকবে, এ নিয়ে তাদের বাবা মায়ের বিরোধে বিচারিক আদালত এবং হাই কোর্ট থেকে বারবার এসেছে আদেশ। আদেশের বিরুদ্ধে আপিলও হয়েছে।

সবশেষ গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান ওই ২ শিশুকে তাদের মা জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানোর হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন।

এই আদেশের বিরুদ্ধে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ইমরানের আপিল আবেদন গ্রহণ করে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ হাবিবুর রহমান ভুইয়া। বাবা-মা যেন আদালতের বাইরে ‘সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে’ বিরোধ নিষ্পত্তি করতে একসঙ্গে বসতে পারেন, সে উদ্যোগ নিতে দুই পক্ষের আইনজীবীদের অনুরোধও করেন তিনি।

এই আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। তবে সন্তান কোথায় থাকলে কল্যাণ হবে, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আপিল শুনানি করতে বাবা ইমরান শরীফের আইনজীবী সময় চান। তখন বিচারক আগামী ২৪ মে তারিখ দেন।

দুই শিশুকে নিয়ে বাবা মায়ের বিরোধের আদ্যোপান্ত

প্রকৌশলী ইমরান শরীফ জাপানে থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে সে দেশের চিকিৎসক নাকানো এরিকোর বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। তাদের ঘরে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২১ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।

মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক।

কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর ওই বছরের ২১ নভেম্বর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন মা নাকানো। পরে আপিল বিভাগ ওই বছর ১৫ ডিসেম্বর এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন।

পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেয়।

ছোট মেয়েকে একদিন পাবে বাবা, একদিন জাপানি মা
এরপর আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেয়, দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে। ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই রায় দেওয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।

এসব ঘটনার মধ্যে ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন এরিকো নাকানো। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় নাকানোর বিরুদ্ধে অপহরণ ও প্রতারণার অভিযোগ এনে গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা করেন ইমরান শরীফ। সেখানে নাকানোর বিরুদ্ধে দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি শুনে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে।

গত ২৯ জানুয়ারি ইমরানের মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত।

তবে আদালতের আদেশ অমান্য করে ছোট মেয়েকে মায়ের হাতে তুলে না দিয়ে আত্মগোপনে যান বাবা। পরে দুই জনকে হেফাজতে নেয় র‌্যাব।

৩১ জানুয়ারি রাতে বড় মেয়েকে নিয়ে জাপান যাওয়ার চেষ্টা করার সময় মা নাকানো এরিকোকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ।

এর আগেও দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তখনও তাদেরকে আটকে দেয়া হয়।

Check Also

বিএনপি বাজারের বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট

রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানার পাশে বিএনপি বাজারের বস্তিতে আগুন লেগেছে। নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার …

One comment

  1. বাংলাদেশী ভাই ওজাপানী ভাবী আপনাদের কাছে আকুল আবেদন আপনারা দুজন দুজনের সাথে কমপ্রমাইজ করে আপনাদের সন্তানদের সুস্থ ভাবে বাঁচারসুযোগ করে দিন। আপনারা শিক্ষিত আপনারা আপনাদের অভিমানের কারণে আপনাদের সন্তানদের জীবন নস্ট করবেন না।আপনাদের ভালোবাসাই পারে আপনাদের সন্তানদের আপনাদের জীবনকে সুন্দর ও সুখময় করে তুলতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *