IPL ের সকল খেলা লাইভ দেখু'ন এই লিংকে rtnbd.net/live
দিনকে দিন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। প্রতিমাসে গড়ে ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহ'ত্যা করেছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত এ সংখাটি দাঁড়িয়েছে ৩৬৪ জন।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানা গেছে। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব আত্মহ'ত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
‘বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীদের আত্মহ'ত্যার হার; আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া কতটা জরুরি?’ শীর্ষক সমীক্ষার ফলে বলা হয়, দেশের দেড়শ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে আত্মহ'ত্যার তথ্য সংগ্রহ করে এই সমীক্ষা করা হয়েছে।
সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ৩৬৪ জন আত্মহননের পথ বেছে নেয় যারা তাদের জীবদ্দশায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছিলেন। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসা, নার্সিং প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থী রয়েছেন। ৩৬৪ জন আত্মহ'ত্যাকারীর মধ্যে ১৯৪ জনই ছিলেন স্কুলগামী শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন কলেজ শিক্ষার্থীরা যার সংখ্যা ৭৬ জন। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননকারীর সংখ্যা ৫০ জন। তবে মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীও ছিলেন ৪৪ জন।
আত্মহ'ত্যাকারীদের বয়সভিত্তিক সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহ'ত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। যা ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ২১ থেকে ২৬ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। ১৩ বছরের নিচে যাদের বয়স, তারাও এই পথ থেকে পিছপা হয়নি। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ অর্থাৎ ২৯ জন আত্মহ'ত্যা করেন। তবে সবচেয়ে বেশি আত্মহ'ত্যা করেছে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা, যার সংখ্যা ১৬০ জন। এছাড়াও সর্বনিম্ন ৭ বছরের একটি শিশুও আত্মহ'ত্যা করেছে।
প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য বিশ্লেষণে বলা হয়, বিগত আট মাসে মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ৬০ শতাংশ এবং নারী শিক্ষার্থী ৪০ শতাংশ। কলেজপড়ুয়াদের মধ্যে ৭৬ জন এই পথ বেছে নেয় যাদের মাঝে ৪৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ নারী। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী বিগত আট মাসে আত্মহ'ত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে ৩২ দশমিক ৯৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। এমনকি মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আত্মহ'ত্যার মাধ্যমে জীবনাবসানের পথ বেছে নিয়েছে যা সংখ্যায় ৪৪ জন। তাদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আত্মহ'ত্যায় স্কুলগামীরা এগিয়ে। বিদ্যালয়গামী অর্থাৎ প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী আত্মহ'ত্যা করেছেন। যা শতকরা ৫৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। আত্মহ'ত্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যা ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আত্মহ'ত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আত্মহননকারীদের মধ্যে মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছেন শতকরা ১২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
এদিকে সমীক্ষায় দেখা যায়, আত্মহ'ত্যায় এবারেও এগিয়ে আছে নারী শিক্ষার্থীরা যা মোট আত্মহননকারীদের ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ বা ২২১ জন। অন্যদিকে পুরুষ শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ বা ১৪৩ জন।
বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আত্মহ'ত্যাকারীদের অবস্থান বিবেচনায় সবার শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। শতকরা ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহ'ত্যা করেন। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ আত্মহ'ত্যা করে। দেশের অপরপ্রান্তে রংপুর বিভাগে আত্মহ'ত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়া বরিশাল বিভাগে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহ'ত্যা করেছেন। অপর দিকে, সিলেট বিভাগে তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী আত্মহ'ত্যা করেন যা ৪ শতাংশ।
এতে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের ৮ মাসের তথ্য বলছে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহ'ত্যা করেছে। প্রেমঘটিত কারণেই সবচেয়ে বেশি আত্মহ'ত্যা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করে হয়েছে।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ জেলার এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি ডিভিশন) আজিজুল হক মামুন এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।