ওমরাহ টিকিটের দাম আকাশচুম্বী

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

ওমরা যাত্রীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়া ঢাকা-জেদ্দা-মদিনা ঢাকা রুটের টিকিট এখন সোনার হরিণ। বিমানসহ এয়ারলাইন্সগুলো ওমরাহ টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়াচ্ছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ওমরাযাত্রীদের টিকিটের দাম কোনো কারণ ছাড়াই দেড়শ’ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি করেছে। এতে চড়া দামে বিমানের টিকিট কিনতে ওমরাযাত্রী ও মাধ্যপ্রাচ্যগামী কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে। আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিমানের কোনো সিট নেই। জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে অনুসরণ করে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো নতুনভাবে ওমরাহ টিকিটের দাম বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে। একাধিক ওমরাহ এজেন্সির মালিক এ তথ্য জানিয়েছেন।

ওমরাহ টিকিট এজেন্সিগুলোর কাছে সমহারে বিক্রি নিশ্চিতকরণ এবং ওমরাহ ফ্লাইট সঙ্কট নিরসনে দ্রুত জেদ্দা-মদিনা রুটে সিডিউল ফ্লাইট বৃদ্ধিসহ অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার জোর দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) এর মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ। গত ২৮ আগস্ট পৃথক পৃথক চিঠিতে আটাব মহাসচিব এ দাবি জানিয়েছেন। কোনো কারণ ছাড়াই বিমান ১ অক্টোবর থেকে ওমরাহ টিকিটের দাম এক লাফেই ১৫ হাজার টাকা জনপ্রতি বৃদ্ধি করায় আটাব মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ওমরাহ টিকিটের মূল্য বৃদ্ধির ঘটনাকে ওমরাযাত্রীদের ওপর জুলুম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ওমরাহ টিকিটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকারের যোগাযোগ করা হলে বিমানের ওমরাযাত্রীদের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি তিনি অবহিত নন বলে জানান।

বিমানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে চিহ্নিত ট্রাভেল এজেন্সীগুলো আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সকল টিকিট কিনে নিয়ে গেছে। এর আগেও সেপ্টেম্বর মাসের পুরো ওমরাহ টিকিট চিহ্নিত ট্রাভেল এজেন্সিগুলো কিনে নিয়ে যায়। ওমরাহ টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করছে কতিপয় সিন্ডিকেট চক্র। সাউদিয়া এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ওমরার গ্রুপ টিকিট কিনে চড়া দামে বিক্রি করছে কতিপয় চিহ্নিত ট্রাভেলস এজেন্সি। সিন্ডিকেট চক্র ওমরাযাত্রীদের কাছে ১০/১২ হাজার টাকা অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে। হাবের সাবেক মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি ওমরাহ টিকিট সিন্ডিকেট চক্রের কবল থেকে রক্ষার জন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন এবং দুদকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, বিমানের টিকিটের জন্য ওমরাযাত্রী ও বিদেশগামী কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে। তিনি বলেন, টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যে এসব দেখার কেউ নেই। তিনি ওমরাযাত্রী ও বিদেশগামী কর্মীদের দুর্ভোগ লাঘবে অনতিবিলম্বে বিমান ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গত হজে যেসব ব্যক্তি নানা শর্তের কারণে হজে যেতে পারেননি তাদের অনেকেই হজের পর পর ওমরায় যাওয়া শুরু করেছেন। এছাড়া আগস্ট সেপ্টেম্বর মাসে ছুটিতে আসার প্রবাসী বাংলাদেশিরা মধ্যপ্রাচ্যের স্ব স্ব কর্মস্থলে যাওয়া শুরু করেছে। এতে যাত্রীর চাপ ব্যাপক হারে বাড়তে থাকায় ওমরাহ টিকিট নিয়ে অরাজাকতা শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাউদিয়া এরাবিয়ান এয়ার লাইন্স সপ্তাহে ২৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করহে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সউদীতে সপ্তাহে ১০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সাউদিয়া এয়ারলাইন্স বর্তমানে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে ওমরা টিকিট বিক্রি ৮৬০ মার্কিন ডলারে বিক্রি করছে। এর আগে বিমান ৭০০ ডলার থেকে ৮৫০ মার্কিন ডলারে বিক্রি করছে। বিমানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ১১ অক্টোবর এক সার্কুলারের মাধ্যমে ঢাকা-জেদ্দা মদিনা ঢাকা রুটের ১ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওমরাহ টিকিটের দাম ৯৫০ ডলার, ১০৫০ ডলার ও ১১০০ ডলার নির্ধারণ করেছে। হাবের ইসির অন্যতম সদস্য মুফতি মুস্তাফিজুর রহমান ১ অক্টোবর থেকে বিমানের ওমরাযাত্রীদের ভাড়া এক লাফেই ১৫ হাজার টাকা বৃদ্ধির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ব বাজারের জ্বালানি তেলের মূল্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এই মূর্হুতে ওমরাযাত্রীদের টিকিটের ভাড়া বৃদ্ধি কোনো যুক্তিকতা নেই। এতে ওমরাহ টিকিট নিয়ে অরাজাকতার সৃষ্টি হবার আশঙ্কা রয়েছে।

বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সীমিত। ফলে টিকিটের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। জেদ্দা ও মদিনা রুটের ৭৫ হাজার টাকার টিকিট বর্তমানে বিক্রি করছে ১ লাখ ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায়।

আটাব মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, দেড় মাস আগেই বিমানের সউদী আরবগামী সেপ্টেম্বরের সব টিকিট বিক্রি হওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী কর্মী ছুটিতে দেশে আসার পর ছুটি শেষে তারা বিদেশের স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছেন। হজ কোটা অর্ধেক করার কারণে ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যাও বিপুল হারে বেড়েছে। এ জন্য সাউদিয়া ও বিমানের টিকিটের চাহিদা বেড়েছে। তিনি বলেন, এয়ার এরাবিয়া এয়ারলাইন্স ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে ৭৫ হাজার টাকায় গ্রুপ ওমরাহ টিকিট বিক্রি করছে। এমিরেটস এয়ালাইন্স ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে ৮০ হাজার টাকা থেকে ৮২ হাজার টাকায় ওমরাহ টিকিট বিক্রি করছে। তিনি বলেন, বিমানের সউদীগামী ফ্লাইটের নামহীন সকল অবৈধ টিকিট বাতিল করতে হবে। সরাসরি এজেন্সির কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা নিতে হবে। ওমরাহযাত্রীদের চাপ কমানোর জন্য ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে শিডিউল ফ্লাইটসহ অতিরিক্ত ফ্লাইট চালু করতে হবে। এ ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও এমিরেটস এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

বিমানের টিকিট কাটার জন্য নির্দিষ্ট যাত্রীর নাম ও পাসপোর্ট নম্বর প্রয়োজন হলেও বিমান কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রায় ৮টি ট্রাভেল এজেন্সি কোনো যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর বা অন্য কোনো কাগজপত্র জমা না দিয়েই গত মাসে জেদ্দা ও মদিনা রুটের গ্রুপ টিকিট কেটে নিয়েছে। এদিকে, চলতি মৌসুমে সাত ধরনের ভিসাধারীদের ওমরাহ পালনের অনুমতি দেবে সউদী হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে গালফ নিউজ। দুবাইভিত্তিক এ সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা, পার্সোনাল ভিজিট ভিসা, ই-ট্যুরিস্ট ভিসা, সউদী এয়ারপোর্টে আসার পর দেয়া ভিসা (অন অ্যারাইভাল), ‘শেনজেন’ ভিসাধারীদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা, ইউএস ও ইউকে ভিসা, লাইসেন্সধারী পর্যটন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ওমরাহ ভিসা এবং ‘মাকাম’ প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রাপ্ত ভিসাধারীরা চলতি বছর ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সউদী আরবে প্রবেশ করতে পারবেন।

সউদী আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওমরাহযাত্রীদের আগমনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিমানবন্দর নেই। তারা দেশের যেকোনো আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। এছাড়া ওমরাহযাত্রীরা ৯০ দিন পর্যন্ত সউদী আরবে থাকতে পারবেন এবং এই সময়ের মধ্যে তারা মক্কা, মদিনাসহ অন্য সব শহরের মধ্যে যাতায়াত করতে পারবেন। ওমরাহ পালনের জন্য অনুমোদিত ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভিসা আবেদনের সুযোগেরও কথাও জানিয়েছে সউদী কর্তৃপক্ষ। এ সুবাদে বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর ওমরাযাত্রী সউদীতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এতে যাত্রীর চাপ দিন দিন বাড়ছে। অতিরিক্ত ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হলে ওমরাহ টিকিটের সঙ্কট অনেকটা লাঘব হবে বলে একাধিক ওমরাহ এজেন্সির মালিক জানান।

Check Also

এরদোগানবিরোধী প্রচারণায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইকোনোমিস্ট

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ১০ দিন আগে প্রকাশিত ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনোমিস্ট কভার পেজসহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *