মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী প্রধানমন্ত্রী, চালক আফিজা

IPL ের সকল খেলা  লাইভ দেখু'ন এই লিংকে  rtnbd.net/live

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পরিবর্তে মেট্রোরেল উদ্বোধনের ভেন্যু ঠিক করা হয়েছে দিয়াবাড়ী মাঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহেই স্থান পরিবর্তন করার কথা জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন শেষে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। টিকিট কেটে দিয়াবাড়ী থেকে উঠে আগারগাঁও স্টেশনে নামবেন তিনি। আর এই ট্রেনটি সেদিন চালাবেন একজন নারী চালক। তার নাম মরিয়ম আফিজা।

উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ মেট্রোরেলে প্রকল্পের প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৮ ডিসেম্বর। এই অংশে থাকছে ৯টি স্টেশন। ২৯ ডিসেম্বর সকাল থেকে মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বোধনের দুটি স্পটের কথা জানিয়েছিলাম। তিনি খোলা মাঠে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই হিসেবে দিয়াবাড়ী মাঠে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘উদ্বোধন শেষে প্রথম ট্রেনের যাত্রী হবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি টিকিট কেটে উত্তরা থেকে উঠে আগারগাঁও এসে নামবেন।’
মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনের কনকোর্স লেবেলে সংবাদ সম্মেলন করবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে উদ্বোধনী আয়োজন থেকে শুরু করে ট্রেন পরিচালনার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

এসব বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, ‘গত মঙ্গলবার একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। সেখানে যার যা দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য অতিথিরা প্রধান যে সড়ক ব্যবহার করবেন, সেগুলো সুন্দর করতে বলা হয়েছে।’ এ ছাড়া সিকিউরিটি, ফায়ার সার্ভিস অ্যাম্বুলেন্স এসব বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মেট্রোরেল উদ্বোধন অনুষ্ঠান সঠিকভাবে করতে অনেক কমিটি করেছে ডিএমটিসিএল। ডিএমটিসিএল সূত্র থেকে আরও জানা যায়, উদ্বোধনের পর কিছুদিন সকাল-বিকেল মিলিয়ে মেট্রোরেল দিনে ৪ ঘণ্টা করে চলাচল করবে। এজন্য ১২টি ট্রেন প্রস্তুত থাকলেও তিন মাস পর চলবে ১০টি। তবে প্রথম সপ্তাহ চালানোর পর যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় ট্রেন চলাচল করবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে পাঁচটি ট্রেন চলবে। অফিসগামী যাত্রীদের কথা চিন্তা করে ট্রেন চলাচল শুরু হবে সকাল ৮টায়।
ভাড়া নিয়ে আলোচনা
মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৬০ টাকা। স্মার্ট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে ডিএমটিসিএল। কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, সাপ্তাহিক, মাসিক, পারিবারিক কার্ড আগে থেকে কেনা যাবে। প্রকল্পের নথি বলছে, মেট্রোরেল দিয়ে ৩৫ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যাওয়া যাবে।
মেট্রোরেলের স্টেশনে লিফট, এক্সেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা। তিন তলায় থাকবে রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরাই ওই তলায় যেতে পারবেন। মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি কোচ। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন।

উত্তরা-আগারগাঁও যেতে লাগবে ২০ মিনিট
ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রোরেলে দরজা খুলতে অপেক্ষা করার বিষয়ে যাত্রীদের সচেতনতার প্রয়োজন আছে। টিকিট কাটার জন্যও কিছুটা সময় দিতে হবে। এ জন্য শুরুতে ট্রেন চলাচলের সময় ও যাত্রীসংখ্যা সীমিত হবে। ট্রেনে যাত্রীদের ওঠানামা ও আসনে বসা—এসব বিষয়ে অভ্যস্ত ও পরিচিত করতে শুরুতে ট্রেন কিছুটা বাড়তি সময় অপেক্ষা করবে। এজন্য উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও যেতে সময় লাগবে প্রায় ২০ মিনিট। পরে তা ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে নেমে আসবে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে একদম শতভাগ অপারেশন যেভাবে চলে, সেভাবে মেট্রোরেল চলবে। প্রথমে সকালে এবং বিকেলে চলার এক সপ্তাহ পর আমরা সময় বাড়াব।’ ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমে সব স্টেশনে থামবে না ট্রেন। শুরুর স্টেশন উত্তরা উত্তর থেকে ছেড়ে ট্রেনটি পল্লবী গিয়ে থামবে। এরপর না থেমে আগারগাঁও চলে যাবে।

২০২৫ সালের মধ্যে মেট্রোরেলের পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। যদিও ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২৩ সালেই ২২ কিলোমিটার পথে চলবে মেট্রো ট্রেন। তখন ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত ২৪ ট্রেন।
মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১২ সালে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এ পথে ৯টি স্টেশনের মধ্যে রয়েছে উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ী), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে সাতটি—বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেস ক্লাব ও মতিঝিল। অবশ্য মেট্রোরেল কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে।

Check Also

আমি কি দুর্নীতি করেছি, আপনারা বলেন: পাপন

‘বিএনপি এখনো শুধু মিথ্যাচার করে চলেছে। আপনাদের বিবেককে প্রশ্ন করেন দেশে কি দুর্নীতি হয়েছে? ভৈরব, …